December 23, 2024, 1:37 pm
নোটিশ :
প্রকাশক ও সম্পাদক : মাসুম হাওলাদার।   বার্তা সম্পাদক : তানভীর সোহেল।     প্রধান কার্যালয় :  রেল রোড (কৃষি ব্যাংকের সামনে) বাগেরহাট। ইমেইল : press24masum@gmail.com

বান্দরবানের পথে:দুর্গম থানচির কথা শুনে আমার লোভ হয়

লেখক: মো: ইয়াকুব আলী, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, ঢাকা 313 বার
আপডেট সময় : বুধবার, এপ্রিল ১০, ২০২৪


কোন পথে বান্দরবান যাব সে বিষয়টি নিয়ে আগের রাতে কথা হয়েছিল মাতামুহুরী নদীর লামা বাজার ঘাটে। আমার ভালো ধারণা নেই। চয়ন বলল থানচি হয়ে যাওয়া যায়। দুর্গম থানচির কথা শুনে আমার লোভ হয়। চয়ন বলল, এদিক দিয়ে গেলে দর্শনীয় সব কিছুই রাস্তায় পড়বে। যেমন : চিম্বুক, নীলগিরি ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে নতুন করে বান্দরবান থেকে সময় নষ্ট করে নীলগিরি দেখতে আসতে হবে না। ড্রাইভার ভূটানকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, থানচি দিয়ে অনেক ঘুরাপথ হবে। চকোরিয়া হয়ে গেলে লাগবে তিন ঘণ্টা, থানচি হয়ে ৬ ঘণ্টা। প্রায় ৬০-৭০ কিলোমিটার বেশি রাস্তা। বোঝা গেল, ভূটান চকোরিয়া হয়ে যাওয়ারই পক্ষে। ড্রাইভারের সুবিধা অসুবিধার ব্যাপারটি অবশ্যই সর্বাগ্রে বিবেচ্য। তবে থানচির প্রতি লোভও সংবরণ করতে পারছিলাম না।
লামায় দেখার মতো আর কিছু নেই। বান্দরবান পৌঁছেও সেদিনের জন্য বেকার বসে হবে। তাহলে লম্বা পথে পার্বত্য এলাকা দেখে যাওয়াই ভালো। এর আগে ২০০০ সালে স্থানে স্থানে কাঁচা ও আধাপাকা ভেতরের রাস্তা দিয়ে রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি পাড়ি দিয়ে অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করেছিলাম। তবে ভূটান যে ইস্যুটি তুলেনি সেটি হলো নিরাপত্তা। কুকি চিনের (কে এনএফআর) হামলায় মাত্র তিন দিন বাদেই টের পাওয়া গেল ঐ রুটে চলাচল কতটা বিপজ্জনক। গত ৮ তারিখ থেকে তো কুকি চিন রুমা, থানচি, রোয়াংছড়িতে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে।
শুক্রবার। সকাল সাড়ে নটায় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা। রুট: আলীকদম- থানচি-চিম্বুক-নীলগিরি-বান্দরবান। পর্বতের উপর দিয়ে তৈরি আলীকদম-থানচি রুট দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম সড়ক। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সড়কটি নির্মিত হয়েছে। আলীকদম জিরো পয়েন্ট থেকে আলীর গুহা পার হয়ে কিছুদূর যেতেই সেনা চৌকি। গাড়ি থামিয়ে শকট থেকে দ্রুতবেগে নেমে গিয়ে কি যেন কথা বলে দ্রুততম সময়ে অনুমোদন নেয় ভূটান। এটি ভূটানের অদ্ভুত এক গুণ। তল্লাশি চৌকিতে তার সময় লাগে না। গাট্টুগুট্টু গড়নের ভূটান বড়ুয়া বান্দরবানের লোক। পার্বত্য এলাকার পাকা ড্রাইভার। নেতা কিছিমের মানুষ। কথা বলে কাটা কাটা। কুচ পরোয়া নেহি টাইপ।
তল্লাশি চৌকি পার হয়ে উঠনি। ধাই ধাই করে উপরে উঠতে থাকে ফোর হুইলার। কানে তালা লাগিয়ে গাড়ি উঠে যায় পর্বতের শীর্ষ দেশে। অনেক বাঁক ও চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কতদূর গিয়ে গাড়ি থামায় ভূটান।

  • গাড়ি থামল কেন? ব্যাপার কি?
    -ভিউ পয়েন্ট। এ পথে প্রথম ভিউপয়েন্ট। জায়গাটি থেকে বিস্তীর্ণ এলাকা দেখা যায়। আলীকদম উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে এটি। বিশেষ কোনো কারুকায নেই। দেখতে মোটামুটি। তাও ভিউপয়েন্টের প্রতি সম্মান তো দেখাতে হবে! নেমে ঘুরে ফিরে দেখি।

ডিম #পাহাড়

ভিউপয়েন্ট পার হয়ে আমি ঢুলু ঢুলু। আবার উঁচু নিচু। পাহাড়ের বাঁক। ভূটান ইতোমধ্যেই জেনে গেছে উপরে উঠতে আমি অস্বস্তিতে থাকি। ভয় পাই। গাড়ি চলছে তো চলছেই। রাস্তায় একটি গাড়িও চোখে পড়ছে না। জনমানবের চিহ্নমাত্রও নেই। নেই কোনো বাজারঘাট। লোকালয়ের দিশা। এমন জনবিরল রাস্তা পৃথিবীতে কটি আছে সেটিই প্রশ্ন। সিটবেল্ট আমার বাঁধাই ছিল। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারবো না।
গাড়ি থামল সুন্দর একটি ভিউপয়েন্টে। ভূপৃষ্ঠ থেকে জায়গাটা অনেক উপরে। ভূটান বলল, এটিই ডিম পাহাড়। ডিম পাহাড়? আমরা কি বহুদূর পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছি?
-স্যার, আমরা ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ উঠনিটা পার হয়ে এসেছি।
-ওহ! মিস হয়ে গেল। ডিম পাহাড়ের চূড়ার আকৃতি নাকি ডিমের মতো। সেজন্যই এর নাম ‘ডিম পাহাড়’। আমরা কোনো ডিম্বাকৃতির জিনিস দেখিনি। সমতলই তো মনে হলো। তবে ডিমের মতো দু-তিনটি পাথরকে পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে ভিউপয়েন্টের প্রবেশমুখে। চয়ন মাহাথিরকে বলল, এগুলো হলো ডিমপাহাড়ের ডিম। ডিমপাহাড় আলীকদম ও থানচি উপজেলা সীমান্তের ঠিক মাঝে অবস্থিত। জায়গাটিতে অনেক উঁচু উঁচু ঘাস। একটি টিনের চালাঘর আছে এখানে। হয়ত পথিকদের দীর্ঘ পথ চলার ক্লান্তি দূর করার জন্য একটু বিশ্রামের ব্যবস্থা। এ পথে তো আশ্রয় নেয়ার মতো আর কোনো স্থাপনা চোখে পড়েনি। বড় গাছও নেই একটিও। রাস্তাটিই যে পর্বত শীর্ষের উপর দিয়ে তৈরি। কম উচ্চতার গাছ আছে রাস্তা থেকে হাজার ফিট নিচে। শনের মতো ঘাস। ঘাসে ফুল ফুটেছে। কয়েকটি পাম গাছের মতো লম্বা গাছ চোখে পড়ল নিচে। আমরা তখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আড়াই হাজার ফুট উঁচুতে। এত উঁচুতে সড়ক তৈরি করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নাকি এক যুগ লেগেছে। টিনের চালাঘরটি মনে হয় ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। বাতাসের দাপটায় চাল স্থানে স্থানে থেতলে রয়েছে। বহু লোক ঘুরে গেছেন এ জায়গা। টিনের চালার ভেতরের দিকের দেয়ালে কয়লা বা সুড়কি দিয়ে তাদের নাম খোদাই করে রেখেছেন ভ্রমণকারীরা। লাভ চিহ্ন দিয়ে প্রিয় মানুষটি নাম লিখেছে কেউ কেউ। চালাঘরের পেছনের দিকে টয়লেটও আছে। তবে ঘাস জঙ্গল এমন হয়েছে যে, ব্যবহার করার সাহস হবে না কারো। জঙ্গলের সাপ-বিচ্ছুর উপদ্রব থাকতেই পারে। হতে পারে অনেক কিছুই। সামনে দূরে দেখা যাচ্ছে উঁচু উঁচু পাহাড়। চয়ন বলল, স্যার ঐ পাহাড়গুলোর উপর দিয়েই আমরা যাব। আমি শিউরে উঠি। ভূটান বলেন, স্যার অন্য কিছু ভাবার দরকার নাই। শুধু রাস্তার লেভেলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। ভূটান নিজেও নাকি তাই করে। সে বলল, অনেকেই ভয় পায়। মাহাথিরের কথা উঠল। মাহাথির জিপের পেছনের অংশে ঘুমাচ্ছে। তাইয়্যিবও পেছনের অংশে। ভূটান বলল, মাহাথির আঙ্কেল আমাকে বলেছে তার মাথা ঘোরাচ্ছে। আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আপনারও কি এমন হয়?আমি বলেছি হ।

তমা তুঙ্গী পযটন #কেন্দ্র

গাড়ি চলছে নির্জন নিঃশব্দ রাস্তায়। রাস্তার ধারের সুউচ্চ ঘাস ছাড়া দেখার মতো এমন কিছু নেই। গাড়ি আরো এগিয়ে চলে। এরপর ভূটান গাড়ি থামাল চমৎকার একটি জায়গায়। তমা তুঙ্গী পর্যটন কেন্দ্র। রাস্তার দুপাশেই স্থাপনা। সেনাবাহিনী নির্মিত এ পর্যটন কেন্দ্রটি গোটা পার্বত্য এলাকায় সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন। প্রশস্ত রাস্তার দুপাশে ভিউপয়েন্ট। ভিউপয়েন্টগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সুপরিসর জায়গা নিয়ে। বামপাশের ভিউপয়েন্টটি ভিউপয়েন্ট ১ নামে পরিচিত। সেখানে বড় একটি গর্জন গাছের চারদিকে বাঁধাই করা হয়েছে। সেখান থেকে দূর পাহাড়ের উপর দিয়ে নির্মিত সড়ক চোখে পড়ে। চোখে পড়ে অসংখ্য সবুজ পাহাড়, পাহাড়ে সৃজিত ফলের বাগান, উঁচু নিচু উঠনি। রোড লেভেল থেকে লাল ইটেথ সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয় ডানপাশের ভিউপয়েন্টে। এটি ভিউ পয়েন্ট-২। তমা তুঙ্গীর এ চত্বরটি আরো বেশি সুপরিসর ও সুবিস্তৃত। গ্রানাইট টাইলসের দেয়ালে খচিত দুটো নাম: তমা তুঙ্গী। হাঁটা চলার জায়গা প্রচুর। ঝকঝকে চকচকে। ছবি তোলার জন্যই যেন জায়গাটিকে অপার মমতায় গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে এলে যে কারো মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। কনক্রিট স্ট্রাকচারে তৈরি করা হয়েছে দিক নির্দেশক দুটো পয়েন্ট: একটির ভেতর দিয়ে দূর দিগন্তে তাকালে তাজিংডং ও কেউকারাডং অন্যটি দিয়ে ডিম পাহাড় দেখা যায়। উদ্বোধন ফলকের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০২১। ওয়াকওয়ে বানানো হয়েছে লাল ও বাদামি টালি দিয়ে। এখানকার বিশ্রামাগার ভবনটিও সুন্দর। ভবনের ছাদে লাল রঙের টালি ব্যবহার স্থাপনাটিকে আরো নয়নাভিরাম করেছে। ইস্পাতের পাতের রেলিংগুলোর রংও লাল। বসার জন্য বএঞ্চই আছে। চত্বরের মাঝে একটি ঝর্না। এখানে ছবি তুলতেই হলো। প্যানারমিক ভিউ দিয়ে আমার ছবি তুলল তাইয়্যিব।চারদিকে যত দূর দৃষ্টি যায় দেখলাম। লাল মাটির নগ্ন পাহাড়। কিছু কলা গাছও আছে। আছে ঝোপঝাড়। শনের মতো বিশাল বিশাল ঘাসগুলোতে ফুল ফুটেছে। মাহাথির বমি করে হাল্কা হয়। মুখ ভরে বমি হওয়ার তার রোজা ভেঙে যায়।

থানচি #বাজার

আমাদের পরের স্টপেজ থানচি। একটি ব্রিজ পার হয়ে থানচি বাজার। থানচির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী সাঙ্গু বা শঙ্খ। সাঙ্গু খাঁটি একটি দেশি নদী। উৎপত্তিস্থল বান্দরবানের মদক এলাকার পাহাড়ে। থানচি সদর, বান্দরবান শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা ও বাঁশখালীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। দৈর্ঘ্য ১৭০ কিলোমিটার।
থানচি বাজার দেখা ছিল এ রুটে আসার আমাদের মূল আকর্ষণ। বাজার সংলগ্ন থানচি সরকারি হাইস্কুল। থানচি বাজারে অনেকগুলো শুঁকির দোকান রয়েছে। ট্যুরিস্ট ধরার জন্য আবাসিক হোটেলও আছে কয়েকটি। বাজারের ভেতর দিয়ে নদী ঘাটে যাই। এখান থেকে নৌকা নিয়ে ভেসে যেতে হয় দূরে। চয়নের খুব ইচ্ছে ছিল এখানে নৌকাভ্রমণের। ভূটান জানায়, সম্ভব হবে না। পরিচয়পত্রসহ কাগজপত্র থাকতে হবে। থানা থেকে পারমিশন নিতে হবে। সাথে স্থানীয় গাইড লাগবে। এ সময় তাইয়্যিব টয়লেটে যাবে জানালে নদী দেখা ক্ষান্ত দিয়ে এক রেস্ট হাউসে গিয়েও ব্যবস্থা করা যায়নি। পাবলিক টয়লেটের খোঁজ নিয়ে জানা গেল টয়লেটের চাবি যার কাছে তিনি নেই। বাইরের দিকটাতে খুঁজতে বললেন। পাশের দোকানে জিজ্ঞেস করলে সামান্য দূরে খুঁজতে বললেন। ও দিকটাতে কেউ নেই। ৪/৫জন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন।
ভাই এদিকে লোক আছে?
-আমরাই তো লোক। ভরাট কন্ঠে বললেন পুলিশের দলনেতা।
-না। টয়লেটের চাবি যার কাছে তাকে খুঁজছিলাম আর কি।
-আপনারা? কোথা থেকে এসেছেন?
-ঢাকা থেকে?

  • (ভাব নিয়ে) কি করেন? পদ-পদবি?
    পরিচয় পেয়ে যেন কিছুটা লজ্জিত হয়। চাবিওয়ালা সেই লোকটিকে ডাকাডাকি শুরু করেন। জানা গেল সেই লোক এ এলাকায়ই নেই। ভূটান আমাদের নিয়ে মেইন রোডের অপর পাড়ের একটি পাবলিক টয়লেটে নিয়ে গেল। পাহাড়ি রাস্তার ঢালে একটি পাম্প হাউস সংলগ্ন পাবলিক টয়লেট। মাহাথির আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল একজন উপজাতীয় লোকের দিকে। পাম্প হাউজের নিচ দিয়ে যাওয়া পাইপ থেকে বের হচ্ছে পানি। সেই পানি বোতলে ভরছে সেই লোক। কাছেই ভরা বোতল আছে আরো ৮/১০টি। শ্যাওলা পড়ে বোতলগুলো সবুজ হয়ে পড়েছে। লোকটা সেই পানি দিয়ে মুখ ধুইল। মাহাথির ধরে নিল বাথরুমের ব্যবহৃত পানি দিয়েই লোকটা মুখ ধুয়েছে। বোতলের পানি পাশের চিলতে জমিতে রোপন করা চারায় ছিটিয়ে দিল লোকটি। লামাতে দেখেছিলাম এক লোক বাঁশের বাহুকে দুটো কলসি বেধে হেঁটে যাচ্ছে। একজনকে জিজ্ঞেস করাতে জানালেন, লোকটি বিভিন্ন দোকানে ও বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহ করে। পার্বত্য এলাকায় পানির বড়ো অভাব। নদীতে হাঁটু পানিতেও লোকজন গোসল করে।

নীলগিরি

আমরা তখনো বান্দরবান থেকে ৪৮ কিলো দূরে। গাড়ি থামল নীলগিরি গেটে। গর্জিয়াস এক গেট। টিকেট ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ। নীলগিরি সুন্দর। পযটনে এটি সুবিখ্যাতও। তবে স্থাপনা করা হয়ে গেছে বেশি। মারাইংতং দেখার পর নীলগিরিকে খুবই কৃত্রিম একটি স্পট মনে হয়েছে। নীলগিরিতে আছে সেনা ক্যাম্প, অনেকগুলো ট্যুরিস্ট কটেজ, রেস্তোরা, টয়লেট ইত্যাদি। মাথাপিছু দেড়শ টাকা টিকেট কেটে নীলগিরিতে ঢুকতে হয়। জুমার নামাজ পড়ার জন্য নীলগিরির মসজিদে যাই। মসজিদটি সুন্দর করে বানানো হয়েছে। ইমাম সাহেব ক্লিনশেভড ভদ্রলোক। মনে হয়েছিল আর্মির কোনো অফিসার। সুন্দর খোতবা পাঠ ও নামাজের প্রথম রাকাতে তেলাওয়াত করলেন বাকারার দ্বিতীয় রুকু থেকে। তাইয়্যিব অফিসার ইমামকে দেখে মুগ্ধ হয়েছে। সে ইমামকে অ্যাপ্রিশিয়েট করে ধন্যবাদ দিতে চেয়েছিল। নামাজের পর তার পরিচয় পাওয়া গেল তিনি একজন সাধারণ সৈনিক।

চিম্বুক #পাহাড়

দেরি করার সময় নেই। থানচি বাজার ভালো করে দেখা হলো না। পরের গন্তব্য চিম্বুক। আমার তন্দ্রা ভাঙলে গাড়ি থামে রাস্তার পাশেই চিম্বুক পাহাড়ের শীর্ষদেশে। অবশ্যই এর আগে গাড়ি একের পর এক ঢাল বেয়ে উঠেছে। চিম্বুক বাংলাদেশের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত। এখানকার শীর্ষ দেশ থেকে নাকি বান্দরবান ও কক্সবাজার দেখা যায়। রাস্তার কারণে কি অনায়াসেই না আমরা এর শীর্ষে। এত সহজে এত দুর্লভ বস্তু মিললে তার কি কোনো দাম থাকে?ভূটান জানাল, ‘স্যার, আর এক বছর পর এলে গাড়িতে করেই কেউকারাডং, তাজিংডং দেখতে পাবেন। রাস্তা হয়েই গেছে।’ পাহাড়ে শীর্ষে ওঠার রাস্তা হয়ে গেলে পাহাড় কি আর জীবন্ত থাকে? মেঘের আনাগোনার কারণে চিম্বুককে এক সময় ‘বাংলার দার্জিলিং’ বলা হতো। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এখানে রেস্ট হাউস বানানো হয়েছে। রেস্ট হাউসের তদারককারীর বাসাও রয়েছে যেখানে এক পাল মুরগি চষে বেরাচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাও দেখলাম। পযটন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগে ম্রো জনগোষ্ঠীর আপত্তির কারণে নাকি ভণ্ডুল হয়ে গেছে। যা হোক, এমন জায়গায় ভিড় না বাড়ানোই ভালো হবে বলে মনে হয়।

শৈলপ্রপপত

ডাবল হ্যান্ড ভিউ পয়েন্ট, টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট, ওয়াই জংশন পার হয়ে বান্দরবান শৈলপ্রপাতের ওপর ব্রিজে থামল ভূটানের গাড়ি। এটি একটি শীতল পানির ঝরনা ধারা। ট্যুরিস্ট স্পট। এ সময়ে খুব বেশি পানি নেই। উদ্বোধন ফলকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেনের নাম। এখান থেকে বান্দরবান ৮ কিলোমিটিার। শৈলপ্রপাতটি পার হয়ে একটি শবযাত্রার মুখোমুখি হই আমরা। একজন খ্রিষ্টধর্মীয় ব্যক্তির মরদেহ নেয়া হচ্ছে শেষকৃত্যের জন্য। শবমিছিলে আধাআধি নারী পুরুষ অংশ নিয়েছেন। নারীর সংখ্যা গুনলাম ৬০ জন। আমরা ততক্ষণে বান্দরবান শহরের কাছাকাছি। পেছনে ফেলে এসেছি স্মৃতিময় দীর্ঘ পার্বত্য পথ।
(সময়াবদ্ধ পরিকল্পনার কারণে ঈদের আগের দিন পোস্টটি দিতে বাধ্য হলাম। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদের দিনটি সুন্দর হোক)

লেখক: মো: ইয়াকুব আলী, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, ঢাকা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com