বাগেরহাটে জলবায়ু ন্যায়বিচারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সুরক্ষার দাবী ও জ্বালানি
নিরাপত্তা নিশ্চিতে, জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ, নবায়নযোগ্য
শক্তির সম্প্রসারণ ও টেকসই কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবিতে বাগেরহাটের
রাজপথ আরেকবার কেপে উঠে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক কর্মসূচি পালনের
মধ্যে দিয়ে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়েছে বাগেরহাট শহর। পরিবেশ
রক্ষায় সোচ্চার শতাধিক তরুণ-তরুণীর পদচারণায় শুক্রবার বদলে যায় শহরের
চিত্র। বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড ও রামপালল সদর এলাকায় জমজমাট জলবায়ু
ধর্মঘটে প্ল্যাকার্ড হাতে, উদ্দীপ্ত কণ্ঠে তারা জানিয়ে দেয়—প্রকৃতির
সাথে আর আপস নয়।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকালে গ্লোবাল প্লাটফর্ম অব বাংলাদেশ এবং বাঁধন
মানব উন্নয়ন সংস্থার সহযোগীতায় ও এক্টিভিস্টা বাগেরহাট , রামপালের যৌথ
আয়োজনে এই কর্মসূচি ঘিরে পরিবেশ সচেতনতা এবং তরুণদের প্রত্যয় তুলে ধরে
এক নতুন সামাজিক বার্তার সূচনা ঘটেছে।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থার ‘এ ফোরটি’
প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত এই জলবায়ু ধর্মঘট (ক্লাইমেট স্ট্রাইক)-এ
প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে সরব হন অংশগ্রহণকারীরা। তারা “বাগেরহাটের
প্রাণ প্রকৃতি, প্লাস্টিকে নয় অগ্রগতি! “পরিবেশ বাঁচাও, বাগেরহাটকে
প্লাস্টিক মুক্ত করাও!” আমার ভবিষ্যৎ বিক্রয়ের জন্য নয়, তোমরা ঘুমিয়ে
আছো, আমরা ঘুমিয়ে নেই, আমরা জলবায়ু সুবিচার চাই, সুন্দরবনের বন্ধুরা
চাই!”—এই ধরনের স্লোগান নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে সরব হন।
এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া অর্ণব মিস্ত্রি নামের এক তরুণ বলেন, “আমরা আর
নীরব থাকতে পারি না। আমাদের ভবিষ্যৎ আজ হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের
কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বারবার দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। প্লাস্টিক
দূষণ আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে। আমরা চাই এর অবসান
হোক।”
মিথিলা, আরেক পরিবেশসচেতন তরুণী বলেন,“সুন্দরবন আমাদের অহংকার, আমাদের
রক্ষাকবচ। কিন্তু প্লাস্টিকের আগ্রাসন আজ সেই বনকেও বিপন্ন করে তুলেছে।
আমরা এমন এক বাগেরহাট চাই, যেখানে প্রকৃতি বুক ভরে শ্বাস নিতে
পারবে।”ঈনামা সরকারি কলেজ-এর এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা শুধু স্লোগান
দিচ্ছি না, আমরা পরিবর্তনের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছি। আমরা জলবায়ু সুবিচার
নিশ্চিত করতে চাই ।
এই কর্মসূচির বিষয়ে বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থা’র এ ফোরটি প্রকল্পের
প্রকল্প সমন্বয়ক সোহাগ হাওলাদার বলেন,তরুণদের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে। তারা আজ যে বার্তা দিচ্ছে, তা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব
মোকাবেলার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সাথে সাথে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে
কাজ করছি। এই তরুণদের সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলন
গড়ে তুলতে চাই। জলবায়ুর প্রশ্নে এখন আর অপেক্ষা করার সময় নেই। এখনই সময়
কার্যকর পদক্ষেপের এই কর্মসূচি শুধু স্থানীয় পর্যায়ে নয় বরং জাতীয় এবং
আন্তর্জাতিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বার্তা পৌঁছে দেয়। তরুণরাও পরিবর্তনের
দাবিদার এবং তারা একাট্টা হয়ে জলবায়ুর পক্ষে দারাচ্ছে।
উল্লেখ্য এই আন্দোলনের মাধ্যমে যুবসমাজ জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবিকে
সামনে নিয়ে আসছে এবং এক নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে
পরিবেশবান্ধব নীতি এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার হবে সর্বোচ্চ
অগ্রাধিকার।
পরিবেশ আন্দোলনের এমন যুগান্তকারী কর্মসূচি বাগেরহাটে সচেতনতার নতুন
দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আশা করা যায়, তরুণদের এই আন্দোলন জাতীয় ও
আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং আমরা জলবায়ুর
সঠিক হিসাব বুঝে পাব।। sk