মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছিলেন কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সাতহালিয়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র রেজওয়ান আহমেদ। রেজওয়ান গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। সোনার হরিণ নামক মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে ভর্তি ফি জোগাড় করার সমস্যা নিয়ে তিনি হতাশায় ভুগছিলেন রেজওয়ান আহমেদ। তার জন্য মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই সুযোগ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের সমস্যার কারণে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।”
রেজওয়ান আহমেদের পিতার নাম ইব্রাহিম খলিল। তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে স্বল্প বেতনে চাকুরি করেন এবং মা আছিয়া খাতুন গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রেজওয়ান আহমেদ মেজ। ভাই বোনেরা স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছেন। রেজওয়ান আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, স্কুলের পাঠ্যবই কেনার টাকা নিয়ে তার পরিবার প্রায়ই সমস্যায় পড়তো। তবে, সে কখনোই থেমে থাকেনি। অনেক না পাওয়ার মধ্যে বেড়ে উঠলেও তিনি শিক্ষাজীবনে প্রতিটি ধাপে সাফল্য পেয়েছেন। সাতহালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু। সেখান থেকে পাস করার পর ভর্তি হন গিলাবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক সহায়তায় খুলনা সুন্দরবন কলেজে ছেলেকে ভর্তি করান রেজওয়ানের পিতা। সেখানেও জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্য আনেন রেজওয়ান।”
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। এবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কয়রা উপজেলা থেকে একমাত্র রেজওয়ান আহমেদ গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। রেজওয়ান আহমেদের পিতা ইব্রাহিম খলিল জানান, আমি অল্প বেতনে চাকুরি করি। ২০১৫ সালে হঠাৎ আমার হৃদরোগ ধরা পড়ে। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। এখন ধার-দেনার মধ্যে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি দিতে হয়। ছেলেটার মেডিকেলে ভর্তি আর পড়ালেখার খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। চলতি মাসের ২ থেকে ৮ তারিখের মধ্যে ছেলেকে ভর্তি করাতে হবে। ভর্তির টাকা জোগাড় করতে পারিনি। এখন খুব দুশ্চিন্তায় আছি।”
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুশী বিশ্বাসের দৃষ্টি গোচর হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাস বলেন, আমাদের সকলের দায়িত্ব মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া। এ জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান যানিয়ে তিনি বলেন, আমাদেরকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। যাতে অর্থাভাবে কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্ন পূরণে বাধাগ্রস্ত না হয়।#smk