আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুই ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে তার চাওয়া যেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করার আহবান জানান। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনে নীরব থাকায় ক্ষমা চেয়ে রাজনীতিতে জড়ানোর ব্যাখ্যা দেন সাকিব।”
সাকিবের সেই ফেসবুক পোস্ট প্রসঙ্গে রোববার (১৩ অক্টোবর) মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়াম পরিদর্শন শেষে কথা বলেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আগের ফ্যাসিবাদি সরকারের সঙ্গে তার (সাকিব) সম্পর্ক ছিল, যা নিয়ে উনি ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে, সেটা দেখেছি। তবুও কিছু ইমোশন রয়ে গেছে। তার ব্যাখ্যা নিয়ে লজিক্যাল-ইলজিক্যাল বিষয় আছে, সেদিকে যাব না। তবে কোনো আইনি সমস্যা নেই, এখন পর্যন্ত এটাই দেখা যাচ্ছে। আইন তার মতো চলে, এ নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে মন্তব্য এসেছে ইতোপূর্বে।
দেশের মাটিতে সাকিবের খেলতে আসার বিষয় ও তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি মিরপুরে হওয়া আন্দোলনের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন ক্রিকেটার (দেশে এসে) খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। দেশে আসার ক্ষেত্রে আমি কোনো বাধা দেখি না। তবে যে দেয়াল লিখন হয়েছে, এটা আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি। এটা ইমোশনের ব্যাপার, গণতান্ত্রিক দেশে তাদের যেকোনো ধরনের মুভমেন্ট (আন্দোলন ও দাবি) করার অধিকার আছে। তবে এক্ষেত্রে আমার আহবান থাকবে যাতে কারও নিরাপত্তা হুমকি না আসে। আইনি বিষয় থাকলে সেটার জন্য আইন মন্ত্রণালয় আছে, আমি মন্তব্য করতে পারব না। তবে নিরাপত্তার প্রতি সবাই সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিৎ।
যদিও সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের দেশে এসে খেলা নিয়ে সংশয় পুরোপুরি কাটেনি। যেহেতু আইনি বিষয় আইন মন্ত্রণালয় দেখবে বলে জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। এ ছাড়া বাংলাদেশের আসন্ন সিরিজকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থার যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য ক্রিকেট ভক্তদের প্রতিও আহবান জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ, ‘এখানে দক্ষিণ আফ্রিকা খেলতে আসবে, তাই আমাদের পরিস্থিতিটাও (এনভায়রনমেন্ট) ভালো রাখতে হবে। নইলে আমাদের দেশে অন্যরা খেলতে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি মনে করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের জায়গা থেকে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা দায়িত্ব। একইভাবে ক্রিকেট টিমেরও নিরাপত্তা আমরা দেব। তবে এত বড় মুভমেন্ট হয়েছে, যেখানে ইমোশনও কাজ করে। ইতোপূর্বেও প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এমন মুভমেন্টের পর যেমন খারাপ পরিস্থিতি হওয়ার কথা ছিল ততটা দেখা যায়নি। আশা করব তেমনটা আগামীতে তারা ধরে রাখবেন।
এর আগে এক ফেসবুক পোস্টে সাকিব ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, ‘যদিও স্বজনহারা একটি পরিবারের ত্যাগকে কোন কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোন কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়। এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
অন্যদিকে, সম্প্রতি মিরপুর অঞ্চলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই সাকিবকে নিজেদের এলাকায় বা স্টেডিয়ামে খেলতে দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একদল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী একজোট হয়ে মিরপুরে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে একত্রিত হয়েছিলেন গত ১০ অক্টোবর রাতে। সেখানে তারা দুই নম্বর গেটে সাকিবের ছবি টানিয়ে জুতাপেটা করেন। পরে স্টেডিয়াম এলাকাজুড়ে সাকিব বিরোধী গ্রাফিতিও আঁকেন তারা।”sk