December 23, 2024, 3:50 pm
নোটিশ :
প্রকাশক ও সম্পাদক : মাসুম হাওলাদার।   বার্তা সম্পাদক : তানভীর সোহেল।     প্রধান কার্যালয় :  রেল রোড (কৃষি ব্যাংকের সামনে) বাগেরহাট। ইমেইল : press24masum@gmail.com

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব মোংলা বন্দর গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে:রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান

বাগেরহাট প্রতিনিধি: 200 বার
আপডেট সময় : মঙ্গলবার, জুলাই ৯, ২০২৪

মোংলা দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। এটি খুলনা অঞ্চলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ। এ বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন শিল্প কারখানা, স¤প্রসারিত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বন্দর ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।“মোংলা বন্দরে বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানি-রপ্তানি, বিদেশি জাহাজের আগমনসহ সকল সূচকের ঊর্ধ্বগতি”

মোংলা বন্দর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। এ বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন শিল্প কারখানা,সম্প্রসারিত হয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বন্দর ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।

মো: মাকরুজ্জামান, উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) বলেন (২০২২-২৩) – (২০২৩-২০২৪) অর্থবছরে মোংলা বন্দরের অর্জন:

ক) জাহাজ আগমন: ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮২৭ টি জাহাজ এসেছিল অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৪৬ টি জাহাজ এসেছে অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছরের মোট ১৯ টি জাহাজ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জাহাজ আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৪০ টি অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ০৬ টি জাহাজ বেশি এসেছে। 

খ) গাড়ি আমদানি: ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মোট গাড়ি আমদানি হয়েছিল ১৩৫৭৬ টি অন্যদিকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫৩৪০ টি গাড়ি আমদানি হয়েছে অর্থাৎ এ বছরে ১৭৬৪ টি গাড়ি বেশি আমদানি হয়েছে।

গ) কার্গো হ্যান্ডলিং: ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯৯.০৫ লক্ষ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১০৮.৬৮ লক্ষ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।

ঘ) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং: ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ২৬৫৮৩ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৩১০৪৪ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।

ঙ) রাজস্ব আয়: ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৩০২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৩১৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে । পূর্ববর্তী অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের অর্জিত রাজস্ব আয় ২৮.৫৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন,

বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মোংলা বন্দরের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এ বন্দর দিয়ে ৮৪৬ টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন করে। রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হয় ১৫,৩৪০ ইউনিট। এ সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিংও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পেয়েছে। সকল সূচক পজিটিভ ধারায় থাকার ফলে বন্দরে নিট মুনাফা ২৮.৫৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়াও পদ্মা সেতুর কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মহাকর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এ বন্দর থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও তার পার্শ্ববতী জেলা থেকে পণ্য আনা নেয়া করার ক্ষেত্রে বন্দর ব্যবহারকারীদের সময় এবং অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। পদ্মা সেতুর কল্যাণে রাজধানীর সব থেকে কাছের বন্দর হওয়ায় মোংলা হয়ে পোশাকশিল্পের বিভিন্ন পণ্যও যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। মোংলা বন্দরের সাথে রেল সংযোগ স্থাপন করায় পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নবদিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। মোংলা বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং দ্রুত ও নিরাপদ হওয়ায় বিদেশি ব্যবসায়ীরাও এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ফলে এই বন্দর দিয়ে এখন পণ্য আমদানি-রপ্তানি বেড়ে চলেছে। পণ্যগুলোকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে আমদানি-রপ্তানি করার ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরও সার্বিক দিক দিয়ে প্রস্তুত রয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান  বলেন

১.  প্রধান আমদানি পণ্য: খাদ্যশস্য, সার, গাড়ি, এলপি গ্যাস, স্লাগ, লাইম স্টোন, সয়াবিন তেল, জিপসাম, মেশিনারি, কয়লা, পাথর, ক্লিংকার,পামওয়েল, ফ্লুড ওয়েল,ফ্লাই এ্যাস ইত্যাদি।

২.কন্টেইনারে আমদানি পণ্য: ইলেকট্রনিক্স পণ্য, মোবাইল এক্সোসরিজ, ট্রাইসাইকেল পার্টস, ডাল, ক্যালসিয়াম কার্বনেট,পাটজাতপণ্য,খালি গ্যাস সিলিন্ডার, খেলনা, মেশিনার, রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস, গ্লু এবং মটরপার্টস, লগ, উডেন লগ ইত্যাদি।

৩.  প্রধান রপ্তানি পণ্য:  গার্মেন্টস, পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সাদা মাছ, শুকানো মাছ, ক্লেটাইলস, কাঁকড়া, মেশিনারি, কটন ইয়ার্ন ইত্যাদি। এছাড়া মোংলা ইপিজেড হতে বিশ্বের প্রায় ৩৮টি দেশে পণ্য রপ্তানি হয়। রপ্তানিকৃত পণ্যসমূহ হলো যেমন:গার্মেন্টস,কাগজের তৈরি পণ্য, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ব্যাগ, পাটজাত পণ্য, গাড়ির সিট, হিটার,মারবেল টাইলস,হিউম্যান হেয়ার, জিপার, সিগারেট, জ্যাকেট এবং নেট ইত্যাদি।

৪.জেটি/গুদাম/ইয়ার্ড সুবিধাদি নিম্নরূপ:-বিবরণ সংখ্যা মোট ধারণ ক্ষমতা

ক) জেটি ৫ টি প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৮২মিটার

খ) ট্রানজিট শেড ৪টি ৩০,০০০মেঃ টন ( আয়তন ৪৯০৫×৪ =১৯,৬২০ বর্গমিঃ)

গ)স্টাফিং ও আনস্টাফিং শেড ১টি আয়তন ৪,৭৪৩ বর্গমিটার (প্রায়)

ঘ) ওয়্যারহাউজ ২টি ৩০,০০০মেঃ টন ( আয়তন ৯৮৬০×২=১৯৭২০ বর্গমিঃ)

ঙ) রেফার প্লাগ পয়েন্ট ১৬০টি রেফার কন্টেইনারে এক সঙ্গে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া যায়।

চ) কন্টেইনার ইয়ার্ড ৬টি আয়তন= ৬৮,৬৬৭ বর্গমিঃপ্রায়। ৬০০০(টিইইউজ) কন্টেইনার রাখা যায় (দুই উচ্চতায়)

ছ) কার ইয়ার্ড ২টি প্রায় ২০০০ ইউনিট গাড়ি সংরক্ষণ করা যায়।

মোংলা বন্দরে চলমান প্রকল্পসমূহ (৫টি):

১.মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা: প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে MARPOL কনভেনশনের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পালন, জাহাজের বর্জ্য সমুদ্রে এবং নদীতে নিক্ষেপ রোধ, সামদ্রিক পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করা যাবে, মোংলা বন্দরে আগত সমুদ্রগামী জাহাজের বর্জ্য দূষণ থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করা যাবে। সেই সাথে পশুর চ্যানেল ও মোংলা বন্দরের আশেপাশের নদ নদীসমূহ নিঃসৃত তেল হতে দূষণ মুক্ত রাখা সম্ভব হবে।

২.মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ: প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নিরাপদ চ্যানেল বিনির্মাণ, সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কার্য পরিচালন করা সম্ভব হবে।

৩.পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং: প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরে জেটি পর্যন্ত ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং এর সুবিধা সৃষ্টি হবে। এতে বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

৪.আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট: প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক ১.৫০ কোটি টন কার্গো, ৩.৫০-৪.০০ লক্ষ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। এতে করে বন্দরের কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্ট, স্টিভেডরিং এবং শ্রমিক শ্রেণির জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

৫.মোংলা বন্দরের ২টি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণ (পিপিপি এর মাধ্যমে): প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক ১ লক্ষ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। এতে করে বন্দরের কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্ট, স্টিভেডরিং এবং শ্রমিক শ্রেণির জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন উল্লেখযোগ্য প্রকল্পসমূহ:

১. মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন।

২. মোংলা বন্দর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং।

৩. পশুর চ্যানেলে নদী শাসন এবং মোংলা বন্দরের আরও সম্প্রসারণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com