বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোয়ালমাঠ এলাকায় একই সময়ে বিএনপি ও তাদের
দলের সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) অনুষ্ঠান কেন্দ্র ১৪৪ ধারা জারিকে কেন্দ্র করে
দুটি পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সেখানে সংঘাত এড়াতে
বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েত করে প্রশাসন। উপজেলা
বিএনপি মঙ্গলবার বিকেলে পূর্ব নির্ধারিত রশিক লাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে
জনসভা করতে পারেনি। তারা বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের সাইনবোর্ড
এলাকায় জনসভা না করে সমাবেশ করেছে। তবে সমাবেশে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা
ঘটেনি।
এরআগে মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে জেলা
বিএনপির পক্ষ থেকে জনসভা হবে এবং সাবেক এমপি’র সংবর্ধনা অনুষ্ঠান
স্থগিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, বাগেরহাটের
কচুয়া উপজেলার গোয়ালমাঠ এলাকায় একই সময়ে কচুয়া উপজেলা বিএনপি ও
তাদের দলের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই
কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় মাজেদা
বেগম কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এবং চারপাশের ১ কিলোমিটারের
মধ্যে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকল ধরণের জনসমাগম, সভা
সমাবেশ করা, আগ্নেয়ান্ত্র বহন নিষিদ্ধসহ ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৪৪
ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। সব ধরনের সংঘাত এড়াতে ওই এলাকায়
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। ১৪৪ ধারা জারি করা এক
কিলোমিটারের মধ্যে কাউকে কোন কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হয়নি। তবে
উপজেলা বিএনপি ১৪৪ ধারা জারি করা এলাকা থেকে সরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ
সমাবেশ করেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে কচুয়া উপজেলার গোয়ালমাঠ এলাকার মাজেদা বেগম কৃষি
প্রযুক্তি কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয় মাঠে কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ও বাগেরহাট-২ আসনের
সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিমকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে
কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরমাঝেই পার্শ্ববর্তী গোয়ালমাঠ রশিক লাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়
মাঠে এই সময়ে কচুয়া উপজেলা বিএনপি জনসভার আয়োজন করে। এ নিয়ে উভয়
পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এর প্রেক্ষিতে সোমবার রাতে সংঘাত এড়াতে ওই দুই অনুষ্ঠান স্থলসহ চারপাশে ১
কিলোমিটার এলাকায় সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা
প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার চেয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের
কার্যালয়ে যায় জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারির সমালোচনা করে জেলা বিএনপির
আহŸায়ক টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, আমরা খবরটি জানার পর থেকে
রাতে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তুর তার সাথে আমরা কেউ
সংযোগ স্থাপন করতে পারিনি। তাই সকালে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ছিলাম।
সেখানে ১৪৪ ধারা জারির জন্য যে কথা বলা হয়েছে তার কোন ভিত্তি আমরা খুঁজে
পাইনি। সেখানে সাবেক এমপি (সেলিম) তিনি আমাদের দলের কেউ না। তারা
আমাদের সমাবেশ তারা বন্ধ করতে পারেন না। মঙ্গলবার বিকেলে হাজার হাজার
নেতাকর্মীদের নিয়ে কোন প্রকার সংঘাত ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ
সফল করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এমপি সেলিমের ভাই ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি
এমএ সালাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আইনজীবী
ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক খাদেম নিয়ামুল নাসির
আলাপ, জেলা বিএনপির আহŸায়ক কমিটির সদস্য শাহেদ আলী ররি, সৈয়দ নাসির
আহম্মেদ মালেক, সমশের আলী মোহনসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের
নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, আরেক সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক
এমপি এম এ এইচ সেলিম লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, যেহেতু প্রশাসন ১৪৪ ধারা
জারি করেছে তাই আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমার কলেজ কর্তৃপক্ষকে
সংবর্ধনা অনুষ্ঠনা স্থগিত করতে বলেছি। ওই অনুষ্ঠান আপাতত হচ্ছেনা।
এ সময় তিনি বিএনপিতে ছিলেন এবং বিএনপিতে আছেন উল্লেখ করে বলেন,
আমি পরিস্থিতির কারণে কেবল দলের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। তা না
হলে হয়তো আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হত। আমি বিএনপির সদস্য পদ
থেকে তো পদত্যাগ করিনি।
দল ও কর্মীদের রক্ষার স্বার্থেই এতদিন রাজনীতি থেকে তিনি দূরে ছিলেন উল্লেখ
করে বলেন, আমি এখনও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রিয় নির্বাহী
কমিটির সদস্য পদে রয়েছি। আমার সদস্য পদ কেউ কেড়ে নিতে পরেনা। আমি
বেগম খালেদা জিয়ার কাজ থেকে সদস্য পদ নিয়েছি। এখানে বিএনপির একটি
গ্রুপ আমার জনপ্রিয়তার ইর্ষাণিত হয়ে এসব ষড়যন্ত্র করছে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক
মাহবুবুর রহমান টুটুল, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ফকির তারিকুল ইসলাম,
সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহবুবুর হক কিশোর, জেলা বিএনপির সদস্য এ্যাড.
আসাদুজ্জামান, সেলিমের বড় ছেলে মেহেদী হাসান প্রিন্সসহ নেতাকর্মীরা
উপস্থিত ছিলেন।ap