শুক্রবার সপ্তাহের ঈদের দিন। শ্রেষ্ঠ দিন। ইসলামে এ দিনের মর্যাদা রয়েছে। সব দিনের মধ্যে জুমাবারকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। কোরআন ও হাদিসে এ দিনের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে।”
হজরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সা. বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা আগের জাতিগুলোর কাছে জুমার মর্যাদা অজ্ঞাত রাখেন। তাই ইহুদিরা শনিবার নির্ধারণ করে। আর খ্রিষ্টানরা রবিবার নির্ধারণ করে। অতঃপর আমরা আসি। আমাদের কাছে তিনি জুমার দিনের মর্যাদা প্রকাশ করেন।’ (মুসলিম ৮৫৬)
জুমার দিনে অন্যতম একটি আমলের নাম দরুদ পাঠ। দরুদ শব্দটি আরবি সালাত শব্দের সমার্থক। সালাত অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা, রহমত বর্ষণ করা, দোয়া করা, কল্যাণ কামনা করা। রসুল সা.-এর ওপর দরুদ পাঠ আমাদের জন্য ওয়াজিব। জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠের কথা হাদিস শরিফে এসেছে।”
হজরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, হজরত রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ কর, কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠাবে সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আমার নিকটতম হবে।’ (আবু দাউদ ১০৪৭, তারগিব ১৫৭)
হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, হজরত রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমরা জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ কর। কারণ, জিবরাইল আলাইহিস সালাম এইমাত্র আল্লাহ তাআলার বাণী নিয়ে হাজির হলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, পৃথিবীতে যখন কোনো মুসলমান আপনার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে আমি তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করি। আমার সব ফেরেশতা তার জন্য দশবার ইস্তেগফার করে। (তারগিব ৩/২৯৯)”
অপর হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা. বলেন, ‘আমার ওপর দরুদ পাঠ করা পুলসিরাত পার হওয়ার সময় আলো হবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন ৮০ বার দরুদ পড়ে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ অন্য রেওয়াতে নবী করিম সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থান থেকে ওঠার আগে ৮০ বার এই দরুদ শরিফ পাঠ করে
اللَّهمَّ صلِّ علَى محمَّدٍ النَّبيِّ الأُمِّيِّ وعلى آله وسلم تسليمًا
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমা’
তার ৮০ বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে যায় ও ৮০ বছরের ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়। (আফজালুস সালাওয়াত ২৬, আত-তারগিব ফি ফাযায়িলিল আমাল ১৪ পৃষ্ঠা)
এ হাদিসকে কেউ কেউ দুর্বল বলে অভিমত দিয়ে থাকেন। কারণ বর্ণনায় তারা বলেন, এ হাদিসের সনদে তিনজন বর্ণনাকারী দুর্বল। তবে ফজিলত বিষয়ের হাদিসের ওপর আমল করাতে সমস্যা নেই বলে অভিমত দেন হাদিস বিশারদ আলেমগণ। এ দরুদ পড়লে আল্লাহ তাআলা যদি গুনাহ মাফ করেন কোনো ক্ষতি নেই। দরুদ পড়ার সওয়াব তো সে পাবেই। তাই দুর্বল হাদিস হলেও আমলের হাদিসগুলোর ওপর আমল করা যায়।”
অন্য হাদিসে হজরত আলি রা. বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি নবী করিম সা.-এর ওপর জুমার দিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করে, সে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নুরের জ্যোতি দেখে লোকেরা বলাবলি করতে থাকবে এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল!’ (কানজুল উম্মাল ১৭৪)”
হজরত আবু উমামা রা. বর্ণিত হাদিসে রাসুল সা. বলেন, ‘আমার ওপর জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ কর। কারণ আমার উম্মতের দরুদ জুমার দিন আমার কাছে পৌঁছানো হয়। যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠাবে, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আমার নিকটতম হবে।’ (তারগিব ১৫৭)”bl