নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাশ বাড়ি ইউনিয়নের এক,দুই ও তিন ( হলুদ বিহার,কাশিমালা,দৌলতপুর) ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য রেখা বানু। জীবনের কঠিন থেকে কঠিন সময় পার করে নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে টিকিয়ে রেখেছেন নিজেকে, এতোটাই অসহায় যে আপন বলতে তেমন কেউ নেই। বাবা মাকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। স্বামী থাকলেও এখন নেই কারন অনেক আগেই রেখাকে ছেড়ে চলে গেছেন। পালিত মেয়েকে বহু কষ্টে লালন-পালন করে বিয়ে দিয়েছেন রেখা বানু।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার পাশে জঙ্গলের মধ্যে কুঁড়েঘরটি জরাজীর্ণ, ঘুনেধরা বাঁশ পলিথিন ও পুরাতন কাপড় দিয়ে চারিদিকে মোড়ানো ঘরটি। ঘরের মধ্যে রয়েছে ভাঙ্গা খাটের উপর পুরাতন কিছু জামাকাপড় রাখা, পাশেই টয়লেট,রান্না করার জন্য মাটির চুলা যা চলে লাকড়ি দিয়ে আর রয়েছে কিছু হ্যান্ডি পাতিল। উপরে ভাঙা টিনের ছাউনি
বৃষ্টি এলে বিছানার চাদর কম্বল জড়িয়ে বসে রাত পার করতে হয় রেখা কে কারন বেশিরভাগ টিন গুলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
কুঁড়েঘরটির নিচের দিকের বেড়াগুলো ইউপোকার দখলের কারনে বাঁশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে যে কেউ অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবে। পাশেই রাখা একটি অনেক পুরাতন সেলাই মেশিন যেটি দিয়ে তিনি ব্যাগ বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেন তবে বয়সের ভারে সেটাও বাদ দিয়েছেন।
জানা যায়, কেউ বিপদে পড়লে সবার আগে ছুটে যান রেখা, যদি স্থানীয় কোনো রোগীর হাসপাতালে থাকার দরকার হয় তিনি সেখানেই থাকেন রোগ ভালো না হওয়া অব্ধি। শুধু তাই নয় এলাকার কারো বিপদ হলে সবার আগে তিনিই ছুটে যান। মানবিক এই আচরণে মুগ্ধ হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ানোর কথা বলেন এলাকাবাসী কিন্তু খরচের কথা চিন্তা করে তিনি সাহস পায়নি পড়ে এলাকাবাসীর খরচে বিলাশবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ১,২,৩ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদপ্রার্থী হোন রেখা বানু।
প্রতীক তালগাছ নিয়ে আরো ৫ জন মহিলা প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩ হাজার ৬ শত ভোট পেয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হোন রেখা।
ইউপি সদস্য রেখা বলেন, আমি জীবনে এতোটাই কষ্ট সহ্য করেছি যা প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। এলাকাবাসীদের টাকা দিয়ে আমার ভোটের পোস্টার বানিয়ে তারাই প্রচার করেছে আমাকে ভালোবেসে। মেম্বার হবার পড়ে অনেকেই আসেন আমার কাছে আমি সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। এমন ও দিন যায় আমার বাজার করার টাকা অন্যকে দিয়ে দিতে হয় কারন এমনভাবে বলে আমার নিজের ই কান্না পায়, আমি কারো কষ্ট সহ্য করতে পারিনা। আমার স্বামীর নাম আমি প্রকাশ করতে চাইনা কারন সে সব সময় ভালো থাক এটাই চাই, সে আমাকে অনেক আগেই ছেড়ে চলে গিয়েছেন তখন থেকেই আমি একা। বাবা মাকে হারিয়েছি বহুবছর আগেই বর্তমানে এতিম আমি। পালিত একটা মেয়ে আছে আমার মাঝে মাঝে তার শশুর বাড়িতে যাই।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আদর্শে আমি আমার জীবনের সবটুকু বিলিয়ে দিয়েছি মানুষের সেবায়,যতদিন বেঁচে আছি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল অনুরোধ তিনি যেন আমাকে একটি ঘর উপহার দেন আমি বাকি জীবনটুকু যেন ভালোভাবে কাটাতে পারি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আদর্শ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি ।
হলুদ বিহার বাসিন্দা ফাতেমা বলেন, রেখা আপা আমাদের জন্য সেরা উপহার, এমন কোনো মানুষ নেই আমাদের ওয়ার্ডে তার উপকার পায়নি। যখন যেটার দরকার রেখা আপার কাছে পেলে তিনি ব্যবস্থা করে দেন। আমাদের সবাইকে ভালোবাসে আমরাও রেখা আপাকে খুবই ভালোবাসি। সসরকারীভাবে যদি তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করে আমরাও খুশি হবো।
কোলা হাটের খাবার হোটেলের মালিক তুফান জানান, এলাকার কারো কোনো বিপদ হলে রেখা কোনোদিন স্থীর থাকেনা। কোনো গর্ভবতী মহিলার প্রসব ব্যথা শুরু হলে তিনি সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে চলে যান, যতদিন সুস্থ না হয়ে বাসায় আসবেন রোগী,ততদিন তাদের সাথেই হাসপাতালে থাকেন তিনি। এতো মানবিক একটা মানুষ আমি জীবনেও দেখিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজ্জাক বলেন, রেখা এমন একজন মানুষ যার গুন অনেক। গ্রামের উন্নয়নের জন্য রাস্তা বানিয়ে দিয়েছেন তিনি, বিদুৎ এর লাইন গ্রামে প্রবেশ করেছে এতে তার অবদান গ্রামবাসী কোনোদিন ভুলবে না। তিনি খুবই অসহায়, নিজের টাকা অন্যদের দিয়ে দেন সব সময় আমরা দেখি। তিনি সুস্থ থাকুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ভারপ্রাপ্ত) মোসা: আতিয়া খাতুন বলেন, আমি এখন আপনার কাছ থেকে বিষয় টি জানলাম, বিষয় টি দেখবো কি করা যায়, আমরা ব্যবস্থা নিব