December 23, 2024, 9:44 am
নোটিশ :
প্রকাশক ও সম্পাদক : মাসুম হাওলাদার।   বার্তা সম্পাদক : তানভীর সোহেল।     প্রধান কার্যালয় :  রেল রোড (কৃষি ব্যাংকের সামনে) বাগেরহাট। ইমেইল : press24masum@gmail.com

রণক্ষেত্র খুলনা : সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য নিহত, গুলিবিদ্ধ ও আহত অনেকেই

খুলনা প্রতিনিধি 155 বার
আপডেট সময় : শনিবার, আগস্ট ৩, ২০২৪

নগরীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে সুমন কুমার ঘরামী নামে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারসেল, বারাব বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ ভ্যানসহ কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়ে। তবে এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ও আহত শিক্ষার্থী-পথচারীর নির্দিষ্ট সংখ্যা শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনার গল­ামারী মোড়, সোনাডাঙ্গা বাইপাস, জিরোপয়েন্ট এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের এসব সংঘর্ষ হয়।”
গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে ময়লাপোতা মোড়ে তাৎক্ষণিক প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সদস্য সুমন কুমার ঘরামী নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক।”


তিনি বলেন, শুরু থেকেই পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। এ সংঘর্ষে আমাদের ২০-২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। অথচ আমার এক ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেললো। পুলিশ লাইন্সের কনস্টেবল সুমন কুমার ঘরামী নিহত হয়েছেন। তাঁর কনস্টেবল নম্বর ৪৬৪১, বিপি নং-৮৮১২১৪৯৯১৩। তিনি কেএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (সোনাডাঙ্গা জোন)-এর দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।”


শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা) অবস্থায় ৭ জনসহ ১৬ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আরও রোগী হাসপাতালে আসছিল বলে জানা যায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে খুলনা নিউমার্কেট এলাকা থেকে বৃষ্টি ও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা গণমিছিল শুরু করে। মিছিলটি বিকেল ৩টার দিকে শান্তিপূর্ণভাবে গল­ামারী মোড় হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পৌঁছায়। সেখানে বিপরীত দিক জিরোপয়েন্টের দিক থেকে পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেন। পরে বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারী মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেলে পুলিশ ধীরে ধীরে পিছু হটে যায়। পরে তারা জিরোপয়েন্টে অবস্থান নেয়। বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শিববাড়ী মোড়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় গল­ামারী মোড়ে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে নগরীর গল­মারী এলাকায় একটি পুলিশ ভ্যানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্তও গল­ামারী এলাকায় থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে।”


অন্যদিকে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র-জনতার গণমিছিলকে কেন্দ্র করে দফায় সংঘর্ষের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল, বারাব বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে অন্ততপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জন আহত হন। এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানায়, শুক্রবার দুপুর ২টায় খুলনা নিউমার্কেট এলাকা থেকে বৃষ্টি ও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গণমিছিল শুরু করে আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি ৩টার দিকে শান্তিপূর্ণভাবে গল­ামারী মোড় হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছায়। সেখান থেকে জিরোপয়েন্ট এলাকায় সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। এতে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জন আহত হন।”


খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরতরা জানিয়েছেন, বিকেল থেকে সংঘর্ষে আহত রোগীরা হাসপাতালে আসছেন। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সিরাজুল ইসলাম (৬০), শাহরিয়ার নীরব (২৪), আবির (২৪), মিজান (৪৮), ফাইয়াস (২৩), রবিনা (৩২), নাবিল (২৪), মিজান (৩২), সৌরভ (২৩), শেখ তানিক (২২), মিতু (২১), তানিয়া (১৯), রাবেয়া সুলতানা (২৩) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া আরো কয়েকজন ব্যক্তিগতভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানান, আহতের অনেকের দেহে গুলি লেগেছে। এদের মধ্যে বয়োবৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কপালে রবার বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। জরুরি ভাবে অপারেশনের মাধ্যমে তাঁর বুলেট বের করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া কমপক্ষে ৭/৮ জনের শরীবের গুলি রয়েছে। বাকীরা টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন।”
অপর একটি সূত্র জানিয়েছেন, খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এএসপি সৌমেন, পুলিশ সদস্য মাজহারুল ইসলাম, সোহানুর রহমান সোহাগ ও রাজু আহমেদের অবস্থা গুরুতর।
নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা থানার গেটে কিছু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। এতে কেউ আহত হয়নি।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক জানান, শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি পালন করা কথা ছিল। কিন্তু তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। বহু পুলিশ আহত হয়েছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার দাবি করেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল নিরস্ত্র শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশ অহেতুক টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সঠিক সংখ্যা পরে জানানো হবে।”

smkb


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com