মানবজাতি, সৃষ্টির সেরা তথা আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে স্বীকৃত। আর এই স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছে মহান আল্লাহর কাছ থেকে। তাই একজন মানুষ হিসেবে যেকোনো কর্মের ক্ষেত্রে আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কর্ম থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কিন্তু সমকালীন যুগে বেশ কিছু অংশে এর বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয়। যেমন বিভিন্ন মাজারে মৃত ব্যক্তির কবরকে সমানে রেখে সেজদা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের অসংখ্য স্থানে এর দেখা পাওয়া যায়। অথচ এটা স্পষ্ট হারাম কাজ। যা শিরক হিসেবে সমধিক পরিচিত। আর শিরকের গোনাহ আল্লাহ সহজে ক্ষমা করবেন না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে, নিশ্চয়ই তিনি তাদের ক্ষমা করবেন না। তবে এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন।’ -সুরা নিসা : ১১৬
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করলে, ব্যক্তি ইমানহারা হয়ে যায়। সে আর মুসলমান থাকে না। তাই নবী কারিম (সা.) কবরে সেজদা করা থেকে উম্মতকে সর্বদা সতর্ক করেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের সময় উপস্থিত হলো, তখন তিনি স্বীয় মুখমণ্ডলের ওপর তার একখানা চাদর দিয়ে রাখলেন। অতঃপর যখন খারাপ লাগল, তখন তার চেহারা থেকে তা সরিয়ে দিলেন এবং তিনি এ অবস্থায় বললেন, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ। তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে মসজিদ (সেজদার স্থান) বানিয়ে নিয়েছে। অতঃপর তারা যা করেছে, তা থেকে নবী কারিম (সা.) মুসলিমদের সতর্ক করছেন।’ -সহিহ বোখারি : ৩৪৫৪
বর্ণিত হাদিস থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, কোনো ব্যক্তির সম্মানার্থে কিংবা ইবাদত মনে করে কবর বা মাজারকে কেন্দ্র করে সেজদা করা যাবে না। কারণ, সেজদা একমাত্র আল্লাহর হক। তিনিই এর প্রাপ্য। এক হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘আমি যদি কাউকে অন্য কোনো লোকের প্রতি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে অবশ্যই স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম।’ -জামে আত তিরমিজি : ১১৫৯
তাই ইবাদত-বন্দেগিসহ সর্বক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত যে, নবী কারিম (সা.) প্রদর্শিত পন্থার বিপরীত কিছু যেন বাস্তবায়িত হয়। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গ শিরক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন। আর তার পরিণতি হবে জাহান্নাম এবং এ রকম জালেমের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ -সুরা মায়েদা : ৭২
এ জন্য সেজদা ও ইবাদত হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে।’ -সুরা যারিয়াত : ৬০
মুসলিম হিসেবে আমাদের ব্যক্তিজীবনে সর্বপ্রকার ইবাদতের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। যার মাঝে জাগতিক ও আখেরাতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই সব মুসলিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত এসব কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে আহ্বান করা, কোরআন-সুন্নাহর সঠিক ব্যাখ্যা মানুষের মধ্যে উপস্থাপন করা। তবেই গড়ে উঠবে, শিরক ও বিদআতমুক্ত একটি সুন্দর মুসলিম সমাজ। মনে রাখবেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বলেছেন, ‘সাবধান, তোমরা কবরসমূহকে সেজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদের নিষেধ করে যাচ্ছি।’ -সহিহ মুসলিম : ১০৭৫