আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ঘটনা তদন্ত
করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ
বাগেরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র
আন্দোলনের মিছিলে হামলার ঘটনার
আট মাস পরে আওয়ামী লীগ দলীয়
সাবেক দুই এমপি,পুলিশের শীর্ষ
কর্মকর্তাসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত
বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা।
বাগেরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলার ঘটনার আট মাস পরে
আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি,পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা, আইনজীবী,
ব্যবসায়ি, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ ৬৭
জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও এক থেকে দেড়শ জনের বিরুদ্ধে দ্রæত বিচার
ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। বাগেরহাটের বিচারিক হাকিম আদালতের জ্যেষ্ঠ
বিচারক আজমীরা ফেরদৌসী মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী সাত কার্যদিবসের
মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন
জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার বিকেলে বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের
গোপালকাঠি গ্রামের বাসিন্দা জুলাই আগষ্টে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের
পতন আন্দোলনে নির্যাতিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জনৈক মিরাজ সেখ
নামে এক ব্যক্তি আদালতে ওই মামলার আবেদন করেন। এই মামলায় সাতজনকে স্বাক্ষী
করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র
আন্দোলন শুরু হলে গত বছরের ৪ আগষ্ট সকালে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে
আন্দোলনকারীরা বাগেরহাট আদালত চত্ত¡রে পৌছলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, বোমা
নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ ও গুলি বর্ষণ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় পুলিশ ও
আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা রামদা, চাপাতি, লোহার রড দিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর
হামলা করে এবং তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয়।
হামলায় আন্দোলনকারীদের অনেকেই কমবেশি আহত হন। এই আন্দোলনকারী প্রাণের
ভয়ে আদালতে ও থানায় মামলা করতে সাহস পাননি বলে ওই মামলার এজাহারে উল্লেখ
করা হয়েছে।
মামলার আসামীরা হলেন, বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সারহান
নাসের তন্ময়, সাবেক এমপি মীর শওকাত আলী বাদশা, পুলিশ সুপারের পদমর্যাদার
বাগেরহাটের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো.
আসাদুজ্জামান, আরেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাসুদ রানা, জেলা
গোয়েন্দা পুলিশের ওসি (ডিবি) মো. মামুনুর রশীদ, বাগেরহাট সদর মডেল থানার
ওসি মো. সাইদুর রহমান, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক (ডিআই-
১) সৈয়দ বাবুল আক্তার, সাধারণ সম্পাদক ভূঁইয়া হেমায়েত উদ্দিন, জেলা আওয়ামী
লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার সাবেক মেয়র খান হাবিবুর রহমান, জেলা
যুবলীগের সভাপতি সরদার নাসির উদ্দীন, জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক খান
আবু বক্কর, জেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি লুনা সিদ্দিকী, জেলা আওয়ামী লীগের
সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ফজলে সাঈদ ডাবলু, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক
সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওশান, ব্যবসায়ি তাপস কুমার সাহা। আসামীর
তালিকায় আইনজীবী, পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের
বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নাম উল্লেখ রয়েছে।
মামলার নথির বরাত দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের
কৌসুঁলী (পিপি) এস এম মাহাবুব মোর্শেদ লালন বিকেলে এই প্রতিদেককে
বলেন, জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৪ আগষ্ট বাগেরহাট আদালত
চত্ত¡রে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায়
জুলাই আগষ্টে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আন্দোলনে নির্যাতিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জনৈক এক সমন্বয়ক দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালে
মামলাটি করেন। মামলায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক এমপি, পুলিশ
কর্মকর্তাসহ ৬৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারক মামলাটি গ্রহণ করে
আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে
(পিবিআই) ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।