বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের দখল নিয়ে বিএনপিপন্থী শ্রমিক সংগঠনের দুটি পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার বেলা সোয়া ১২টার দিকে স্ট্যান্ডের সামনে ওই ঘটনা ঘটে।
এ সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উপস্থিতেই দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ধাওয়া দিতে দেখা যায়। কিছু সময় পর অতিরিক্ত সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসালে উভয় পক্ষ অবস্থান ছেড়ে চলে যায়। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ওই দুটি পক্ষের একটির নেতৃত্বে জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামিম খান এবং অন্যা পক্ষের নেতৃত্বে বাগেরহাট পৌর শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম ভূঁইয়া সেলিম ওরফে সেলিম ভূঁইয়া।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগের নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থিত শ্রমিক ইউনিয়ন লোকজন বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে যায়। তখন কয়েকদিন বাস চলাচল ও টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ থাকে। দু' তিনদিন পর বিএনপির শ্রমিক দল সমর্থিত একটি গ্রুপ বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং আন্ত:জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি গঠন করে। তবে ক'দিন না যেতেই শ্রমিক দলের অন্য একটি পক্ষ একই ইউনিয়নের কমিটি গঠন করে স্ট্যান্ডে আসতে চেষ্টা করে। এরপর থেকেই বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষ মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এর মাঝে সেলিম ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি সোমবার বাসস্ট্যান্ডে যাবে বলে ঘোষণা দেয় গতকাল রবিবার।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিবেচনায় সোমবার সকাল থেকেই বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ মোতায়েন ছিল, টহল চলছিল সেনাবাহিনীর। এরই মাঝে বেলা সোয়া ১২টার দিকে বাসস্ট্যান্ডে পূর্ব দিকের সড়ক দিয়ে লাঠিসোঁটা, দা-ছুরি, রডসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সেলিম ভূঁইয়া গ্রুপের লোকজন স্ট্যান্ডের দিকে আসতে শুরু করে। তখন স্ট্যান্ডের ভেতর থাকা শ্রমিক দল নেতা শামীম খান ও সাইফুল ইসলামের লোকজনও লাঠিসোটা নিয়ে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করে।
এ সময় উভয় পক্ষের মাঝে ইট পাটকেল ছোড়া ও ধাওয়া দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে সেলিম ভূঁইয়ার লোকজন স্ট্যান্ডে ঢুকে স্লোগান দিতে শুরু করে।
তবে সে সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের নিষ্ক্রিয় দেখা যায় দাবি করে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ও অতিরিক্ত পুলিশ আসে। তখনও সশস্ত্র অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে দল ধরে মহড়া দিচ্ছিল তারা। পরে অতিরিক্ত সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে দুই পক্ষই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। সে সময় আশপাশের অবস্থান নেওয়া উৎসুক লোকদেরও সরিয়ে দিতে দেখা যায় সেনাবাহিনী ও পুলিশকে।
বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মুখোমুখি ওই দুটি পক্ষই আন্ত:জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের দুটি কমিটি গঠন করেছে। এদের মধ্যে একপক্ষে শামিম খান সভাপতি ও সাইফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক। আর অন্য পক্ষের আবুল কাশেম ভূঁইয়া সেলিম সভাপতি ও শেখ জাহিদুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক।
উভয় পক্ষই নিজেদের কমিটিকে বৈধ দাবি অপর কমিটিকে অবৈধ বলছে। দুই গ্রুপেরই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও সরকারের শ্রম অধিদপ্তর অনুমোদন আছে বলে দাবি।
এ বিষয়ে শামীম খান বলেন, ফেডাডেরশন ও শ্রম অধিদপ্তর অনুমোদিত কমিটি আমাদের। আমরা শপথ গ্রহন করে শ্রমিক ইউনিয়ন পরিচালনা করছিলাম। সেলিম ভুইয়ার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বাসস্ট্যান্ড দখল করেছে। তারা স্ট্যান্ডে ভাংচুর করে অফিসে থাকা নগদ টাকা ও টেলিভিশন নিয়ে গেছে দাবি করে এ বিষয়ে মামলা করবে বলে জানান।
তবে আবুল কাশেম ভুইয়া সেলিমের ভাষ্য, একটি পক্ষ অবৈধভাবে বাসস্ট্যান্ড ও শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করে চাঁদাবাজী করে আসছিল। শ্রম অধিদপ্তর, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন আমাদের কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা বিএনপিকে অবহিত করে বাসস্ট্যান্ড দখলমুক্ত করেছি। অস্ত্র তাদের কাছে ছিল। আমরা তাদের বের করে দিয়েছি। সেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী ছিল; আমরা কোন ভাঙচুর করিনি।
জানতে চাইলে বাগেরহাট সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান বলেন, আমরা কোন সংঘাত সৃষ্টি হতে দেইনি। সবাই সরে গেছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত রয়েছে।#