বাগেরহাটে রাতে কৃষকের গোয়াল থেকে ৯টি গরু
চুরি,
এখন গোয়াল শুন্য অবস্থায়, নি:স্ব হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
বাগেরহাট জেলা সদরের কাড়াপাড়া এলাকার শিবুপদ শিউলী নামের এক
কৃষকের গোয়াল থেকে ৯টি গরু চুরির করে নিয়ে গেছে চোরেরা।
পরবিবারের একমাত্র আয়ের উৎস্য গরুর দুধ বিক্রি। তা হারিয়ে এখন
নি:স্ব হয়ে পড়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই পরিবারটি। শুক্রবার ভোর রাতে
বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মালোপাড়া এলাকায় এই
গরু চুরির ঘটনা ঘটে। গরু গুলোকে গাড়ীতে করে নেওয়া হয়েছে বলে
স্থানীয়রা ধারনা করছেন। যেকোন মূল্যে চোর সনাক্তপূর্বক দরিদ্র ওই
কৃষকের গরু উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়বাসিন্দারা।
বাগেরহাট সদর মডেল থানা পুলিশ বলছে, গরু চুরির খবর শুনে ওই বাড়ী
পরিদর্শন করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। চুরি হওয়া ৯টি গরুর মধ্যে ৫টি
গাভী, একটি বড় ষাড় ও ৩টি বাচ্চা রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮ লক্ষ
টাকা। ৫টি গাভীর দুধ বিক্রির টাকায় ৪ জনের সংসার চলত ওই পরিবারের।
স্বামী-স্ত্রী দুই জনে মিলে গরুর পরিচর্যা করতেন। শনিবার সকালে
সরেজমিনে ওই বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, গরু থাকার গোয়াল আছে,
খাবারের জায়গা আছে। শুধু গোয়ালে গরুগুলো নাই। মাটিতে বসে
গরু শূন্য গোয়ালের দিকে তাকিয়ে আছেন দুই সন্তানের জননী শিল্পি
রানী শিউলি। পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ৯টি গরু চুরি হওয়ায়
নির্বাক হয়ে পড়েছেন তিনি। আর স্বামী শিবু পদ শিউলী গরুর
সন্ধানে সকাল থেকে ছুটছেন বিভিন্ন হাটে-বাজারে। প্রতিবেশী ও
আত্মীয় স্বজনরা শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন শিল্পি রানীকে। শিল্পি রানী
শিউলি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনের মত রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে
পড়েছি। রাত ৩টার দিকে একবার উঠেছি, তখনও বাইরের আলো জ্বলছিল।
পরে সাড়ে চারটার দিকে ঘুম থেকে উঠে দরজা খোলার চেষ্টা করে খুলতে
পারি না। পরে স্বামীকে বললে সে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে দেখে
আমাদের ঘরের সামনের দরজা দুটো দড়ি দিয়ে বাঁধা রয়েছে। বাইরের
বিদ্যুতের লাইটটিতে লুঙ্গি পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে যাতে আলো দূরে
না যেতে পারে। গোয়ালে গিয়ে দেখি কোন গরু নাই। গোয়ালের
মশারিটি বিভিন্ন স্থান থেকে কাটা। তখন আমার স্বামী
কান্নাকাটি শুরু করেন। পরে তিনি গরু খোজার জন্য বেরিয়ে পড়েন।
শিল্পি রানী শিউলি চরম হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, এই গরুর দুধ বিক্রি করেইআমাদের সংসার চলত। দুইটা ছেলে মেয়ে নিয়ে আমাদের সংসার। ওর
বাবাও তেমন কোন কাজ করতে পারে না। এখন কিভাবে সংসার চলবে
জানিনা। শিবুর বোন কাকলী মন্ডল বলেন, আমার একটা ভাই। সে তেমন
কোন কাজ করতে পারে না। গরু গুলো দেশী জাতের হলেও, ভালই দুধ হত। এই
দুধ বিক্রির টাকায় ওর সংসার চলত। এখনতো ওদের না খেয়ে মরতে হবে ।
পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি যতদ্রæত সম্ভব গরু গুলোকে
উদ্ধার করে দিক। শিবুর প্রতিবেশী শেখ আব্দুল আলী বলেন, বিভিন্ন
এলাকা থেকে রাতে প্রায়ই গরু চুরির খবর পাই । আমাদের এলাকায় বেশ
কিছুদিন চুরি ছিলনা। রাতে শিবুর গোয়াল খালি করে ৯টি গরু
নিয়ে গেল। কাল যে অন্য কারও নেবে না, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমরা
চাই চোরদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হোক। এদিকে খবর পেয়ে
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ
সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই ও চুরির
কাজে ব্যবহৃত পরিবহন শনাক্তের কাজ চলছে বলে জানান বাগেরহাটের
পুলিশ সুপার মো: তৌহিদুল আরিফ। তিনি বলেন, পুলিশ তদন্ত শুরু
করেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই-বাছাইসহ বিভিন্ন বিষয়
সামনে রেখে কাজ করা হচ্ছে। আশাকরি দ্রæততম সময়ের মধ্যে চোর
চক্রদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।#এদিকে একরাতে চার বাড়িতে চুরি,
বাগেরহাটের শরণখোলায় একরাতে চার বাড়িতে চুরি হয়েছে। শুক্রবার (০৮
ফেব্রæয়ারী) দিবাগত রাতে উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামে এই চুরির ঘটনা
ঘটে। চোরেরা এসব বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল্লাহ জানান,
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের ইব্রাহীম হাওলাদার,
সুলতান হাওলাদার, আলমগীর হাওলাদার ও রেনু বেগমের বাড়িতে হানা দেয় চোরেরা।
এসময় এসব বাড়িতে কোনো লোকজন ছিলেন না। গ্রামে অনুষ্ঠিত একটি মাহফিলে
গিয়েছিলেন সবাই। এই সুযোগে সংঘবদ্ধ চোরেরা সিঁদ কেটে ও ঘরের দরজা ভেঙে
একে একে চার বাড়ি থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় দুই লাখ টাকার
মালামাল নিয়ে যায়। চুরির খবর পেয়ে পুলিশ ওইসব বাড়িতে খোঁজখবর নিয়েছে। চোর
শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগীদের থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।#az