বাগেরহাটে ঘুষ, সুপারিশ, হয়রানি ছাড়াই ১২০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরি পেয়েছেন ৩৭ তরুণ-তরুণী। সন্তানদের এই সাফল্যে আবেগে আপ্লুত চাকুরি পাওয়া নতুন পুলিশ সদস্যদের অভিভাবকরা। টাকা-পয়সা ছাড়া যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরি হওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জানান চাকুরি প্রাপ্তরা।
নিয়োগ প্রদানের নানা প্রক্রিয়া ও ধাপ সম্পন্ন করার পরে রোববার দুপুরে বাগেরহাট জেলা পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরিপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান। নিয়োগপ্রাপ্তদের কাতারে নিজেদের নাম শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ভবিষ্যৎ পুলিশ কনস্টেবল ও তাদের অভিভাবকরা।
এরপরেই নিয়োগপ্রাপ্তদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বাগেরহাট জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান, পিপিএম । এসময় তিনি প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলদের উদ্দেশ্যে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় বাংলাদেশ পুলিশের সুযোগ্য আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিপিএম (বার),পিপিএম মহোদয় এর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে কেবল মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তোমাদের নির্বাচিত করা হয়েছে। তাই তোমাদেরকেও দেশের জন্য মন প্রাণ উজার করে কাজ করতে হবে, দেশের মানুষের সেবা করতে হবে, তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতঃ সততা ও কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্বল করতে হবে।
নিয়োগপ্রাপ্তদের বেশির ভাগ হতদরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন স্বপ্ন তাদের চোখে-মুখে। নিজ যোগ্যতায় চাকরি হওয়ায় দেশ সেবায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা তাদের। অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে মাত্র ১২০ টাকায় চাকুরি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান অভিভাবকরা শামীম হাসান নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার মেয়ের চাকুরি হয়েছে। কোন প্রকার ঘুষ-সুপারিশ কিছুই লাগেনি। আমরা খুব খুশি হয়েছি। বাগেরহাট শহরের মুমতাজিন হোসেন শেখ নামের এক তরুণ বলেন, অনলাইনে আবেদন করেছি। এরপর মাঠে এসেছি, শারীরিক, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছি। এর মধ্যে কারও সাথে কোন যোগাযোগ করিনি। আমার কাছে এই চাকুরিটা এখনও স্বপ্নের মত লাগছে।”
মোরেলগঞ্জ উপজেলা জিউধরা ইউনিয়নের জ্যোতি বাছাড় বলেন, এভাবে চাকুরি হবে বুঝতে পারিনি। আমার পরিবারের কোন সক্ষমতা নেই যে চাকুরির জন্য টাকা দেবে। তার উপরে এমন কেউ পরিচিতও নেই যে আমার জন্য সুপারিশ করতে পারে। সাহস নিয়ে আবেদন করেছিলাম। চাকুরি হয়েছে। এখন দেশের সেবা করতে চাই।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আবুল হাসানাত খান বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে গোয়েন্দা পুলিশসহ জেলা পুলিশের সকল সদস্য সতর্ক ছিল। কোন প্রকার টাকা পয়সার লেনদেন বা অনিয়ম রোধে সবাই এক সাথে কাজ করেছি। সব মিলিয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া খুবই স্বচ্ছতার সাথে মেধা ও যোগ্যথার ভিত্তিতে হয়েছে। এখানে কোন প্রকার অবৈধ লেনদেন বা স্বজনপ্রীতি হয়নি। ভবিষ্যতেও এভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা। এবার অনলাইনে আবেদন ও যাচাই বাছাই শেষে ১ হাজার ৬৬৬ জনের মধ্যে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মধ্যে ৩৭ জন নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ জন ছেলে ও ৭ জন মেয়ে রয়েছে।
এ সময় শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। শুধুমাত্র সরকারি ফি ১২০ টাকায় নিয়োগের জন্য মনোনীত হওয়ায় তারা নিয়োগবোর্ড এর সকল সদস্যকে বিশেষ করে পুলিশ সুপার,বাগেরহাট মহোদয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
উক্ত সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) জনাব মোঃ রাসেলুর রহমান সহ প্রার্থী ও তাদের অভিভাববৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
,sm.kb