মাথা মাটিতে ঢুকিয়ে, মাথার চুল দিয়ে চলন্ত মোটর সাইকেল আটকে রাখা এবং মুখে আগুন নিয়ে নানা ভঙ্গিতে শারীরিক খসরত দেখিয়ে হাজারো মানুষ কে বিনোদন দিচ্ছেন আলমগীর হোসেন বাদশা নামের এক ব্যক্তি। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার চাকশ্রী এ বি সি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে শনিবার বিকালে এমন অভিনব সার্কাস খেলা দেখা যায় । বিকেল বেলা খোলা মাটে মুগ্ধ হয়ে সেই দৃশ্য দেখতে এসেছে এলাকার হাজারো মানুষ। বিনা টিকিটে গ্রাম-গঞ্জে এ সার্কাস দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিনোদন দিচ্ছেন নীলফামারী জেলার জলডাঙ্গা এলাকার মোঃ আলমগীর হোসেন বাদশা। সুদুর নীলফামারী থেকে আলমগীর বাদশাহ নিজস্ব একটি ইজিবাইকে চড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে মাথায় ও বুকে ইট ভেঙ্গে, শরীরের উপর সাইকেল রেখে তার উপর ৭ জন উঠিয়ে, মুখে আগুন জ্বালিয়ে, বুকে লোহার রড ঢুকিয়ে এবং চুল দিয়ে মোটরসাইকেল আটকে রাখার কৌশল দেখিয়ে উপস্থিত শিশু, কিশোর, নারী,পুরুষ, বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষকে আনন্দ দেন এই বাদশাহ্। আলমগীর বাদশা বাগেরহাট জেলায় এসেছেন প্রায় মাস হতে চলেছে, থাকবেন পবিত্র ঈদুল আযহা পর্যন্ত। প্রতিদিন সার্কাস দেখিয়ে উপহার হিসেবে পান ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাদশার সার্কাস খেলা দেখে মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাকে খুশি হয়ে এ টাকা উপহার দেন নানান শ্রেণি ও পেশার মানুষ। বৃ-চাকশ্রী এলাকা থেকে সার্কাস দেখতে আসা হামিম ফকির বলেন, আমি এমন সার্কাস আগে কখনো দেখি নাই। পরিবারের সকলকে নিয়ে মাঠে দেখতে এসেছি। অনেক মানুষ আজ মাঠে উপস্থিত ছিলো, এমন সার্কাস যদি এলাকায় মাঝে মধ্যে হয়, তাহলে এলাকার সকলে এক সাথে থেকে এই সব আনন্দ উপভোগ করতে পারবো। উপজেলার রামনগর এলাকা থেকে সার্কাস দেখতে আসা কাসেম শেখ বলেন, বহুদিন পর খোলা মাঠে বিনা টিকিটে এই সার্কাস খেলা দেখলাম। এই খেলা খুব আনন্দ দায়ক খেলা, আমার খুব ভালো লেগেছে গ্রামগঞ্জে এখন খেলা খুব কম দেখা যায় । সার্কাস খেলা দেখে খুশি হয়ে আমিও সহযোগিতা করেছি। সার্কাস দেখতে আসা দর্শনার্থী আব্দুল্লাহ বলেন, আমি আগে কখনো এই সার্কাস দেখি নাই। এলাকার সকল শ্রেণির মানুষের ভিড়ে মুখরিত ছিল এবিসি স্কুল মাঠ। মনে হচ্ছিল যে আজ ঈদের দিন। এমন খেলা মাঝে মধ্যে হলে আমাদের একতা থাকবে। শারীরিক খসরত দেখিয়ে বিনোদন দেয়া আলমগীর বাদশাহ এ প্রতিবেদক কে বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ভ্রাম্যমানভাবে এ সার্কাস খেলা আমি দেখাচ্ছি। মাথায় ইট ভাঙ্গতে পারি, বুকে ইট ভাঙ্গতে পারি, শরীরের উপর সাইকেল রেখে তার উপর ৭ জনকে উঠাইতে পারি, মুখে আগুন জ্বালাইতে পারি, চুল দিয়ে মোটরসাইকেল আটকে রাখতে পারি, এই খেলা গুলা কোন জাদু মন্ত্র নয়। এগুলো হচ্ছে সব অনুশীলন ও সাধনা । বড় ভাইয়ের কাছ থেকে এই খেলা শিখে এটাই সংসার চালানোর একমাত্র ভরসা। তিনি আরো বলেন, নীলফামারী আমার বাড়ী মা-বাবা স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আমার পরিবার। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ আমলে তৈরি দি লক্ষন দাস রয়েল বেঙ্গল সার্কাস পার্টিতে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকার পরে সার্কাস পার্টি বিলুপ্ত হয়। এরপর সংসারের অভাব অনটন দূর ও নিজেদের জীবিকার তাগিদে পারিবারিকভাবে এ ভ্রাম্যমাণ সার্কাস প্রতিষ্ঠা করে গ্রামে-গঞ্জে ছুটে চলি। বিনা টিকিটে গ্রামে-গঞ্জে এ সার্কাস দেখিয়ে কারো থেকে টাকা পয়সা দাবি করে নেইনা। খেলা দেখে খুশি হয়ে মানুষ যা দেন তা দিয়ে চলে আমার সংসার। মাঠে সার্কাস দেখতে আসা স্থানীয় বাইনতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকির মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, চাকশ্রী স্কুল মাঠে যে ভ্রাম্যমাণ সার্কাস প্রদর্শন হয়েছে তা দেখতে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছে এবং খেলা দেখে সাধ্যমত অনেকে তাকে আর্থিক সাহায্য করেছে। বহুদিন পর খোলা মাঠে সার্কাস খেলা দেখানো হলো। যা দেখে মানুষ বিনোদন পেয়েছে।#
az