রাষ্ট্র সংস্কারে তরুণদের ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিগত ৫০ বছরে আমরা প্রবীণদের অনেক শাসন দেখেছি। এখন রাষ্ট্র গঠনে তরুণদের ভূমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।"
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগরে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। নুর বলেন, কমপক্ষে ২১ বছরে সংসদ সদস্য নির্বাচন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে সব দলের তরুণরা এগিয়ে আসবে। অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ খাদে পড়বে আর সফল হলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে সফল হবে। দেশের স্বার্থে এমন সংকট মুহূর্তে এই সরকারকে সমর্থন দিচ্ছি।"
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বেকারত্ব তৈরির কারখানা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষানীতি নতুন করে প্রনয়ণ করে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।এসময় তিনি গোপালগঞ্জে প্রশাসনের গায়ে হাত দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের ৭ দিনের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানান।"
আলোচনা সভায় যুব অধিকার পরিষদের পক্ষে বেকারত্ব নিরসনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়-
১। সকল ধরনের বৈষম্যমুক্ত চাকরি ও কর্মসংস্থানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রতিবছর নিয়মিত বেকারত্বের জরিপ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করতে হবে।"
২। শিক্ষার সকল স্তরে চাহিদা ভিত্তিক ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিভাগে তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩। সকল প্রকার চাকরিতে আবেদন ফি, অবৈধ সুপারিশ, যেকোনো জামানত ও বয়সসীমা মুক্ত চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। ঘুষ ও দুর্নীতির মতো অসদুপায়ে নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া বন্ধ এবং সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে।
৪। স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র তৈরি এবং স্থানীয় উৎপাদন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। তরুণদের সম্পৃক্ত করে দেশের স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
৫। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সনদ জামানতে সুদবিহীন ঋণ প্রদান, শিক্ষিত ও শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ঝড়ে পড়াদের এই আওতায় আত্মকর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দেশের মোট ঋণ প্রদানের ৫০ শতাংশ ঋণ প্রদান করতে হবে। কর্ম ও ঋণ আওতার বাইরে সকল তরুণদের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেকার ভাতা প্রদান করতে হবে।
৬। দেশের সকল প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে শতভাগ চাকরি ও কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে হবে। চাকরি ও কর্মসংস্থানের আওতার বাইরে থাকাদের উপযুক্ত পরিমাণ ভাতা প্রদান করতে হবে।
৭। বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষিতদের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে বা সুদমুক্ত ঋণসুবিধার আওতায় বিদেশে প্রেরণ করতে হবে। বিদেশে তরুণদের জন্য যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে অবাধ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তাদের দেশে অবস্থানরত পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাস গমনে তৃতীয় পক্ষের দৌরাত্ম্য অবসান, প্রবাসে সকল চিকিৎসা, দেশের দূতাবাসগুলো প্রবাসী বান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। প্রবাসীদের প্রবাসে থাকা অবস্থায় সকল জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশ প্রেরণের প্রতিটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের ভিআইপি মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।"
বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মামুনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, যুব অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগরের সহ সভাপতি মামুনুর রশিদ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো: ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।"bl