December 23, 2024, 9:19 am
নোটিশ :
প্রকাশক ও সম্পাদক : মাসুম হাওলাদার।   বার্তা সম্পাদক : তানভীর সোহেল।     প্রধান কার্যালয় :  রেল রোড (কৃষি ব্যাংকের সামনে) বাগেরহাট। ইমেইল : press24masum@gmail.com

নওগাঁর প্রত্যান্ত গ্রামে দিনব্যাপী বইমেলা:বইয়ের মুল্য ১০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত

নওগাঁ প্রতিনিধি: 329 বার
আপডেট সময় : শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪

নওগাঁর মান্দা উপজেলার নিভূত পল্লীগ্রাম মশিদপুর।: জেলা শহর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম কর্ণারে এর দুরুত্ব প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার। এটি জেলার মান্দা ও নিয়ামতপুর উপজেলা এবং রাজশাহীর তানোর উপজেলার সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার প্রত্যান্ত গ্রাম। জেলা, উপজেলা ও সীমান্তবর্তী হওয়ায় অবহেলিত নিভৃত পল্লী গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এ গ্রামে রয়েছে কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও নানা কারণে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রবণতা অনেক বেশি। এতো প্রতিকুলতার মধ্য দিয়েও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমানে বিভিন্ন অবস্থানে রয়েছেন একদল যুবক। নতুন প্রজন্মের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে গড়ে তোলা হয়েছে একটি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি ও পাঠাগার’। এ সংগঠনের আয়োজনে সারা বছরই শিক্ষামুলক বিভিন্ন কর্মসূচী করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে বইমেলা অন্যতম। এবার মশিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২তম বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে।”

২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি ও পাঠাগারের উদ্যোগে মশিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করে। সকাল ৯টায় বইমেলা শুরু হয়ে চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। মেলায় রাজশাহী ও স্থানীয় ৬টি বইয়ের স্টল অংশ নেয়। যেখানে গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও ছোটদের জন্য ছড়া বই রয়েছে। প্রতিটি বইয়ের মুল্য ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। সোস্যাল মিডিয়ার প্রতি আগ্রহ কমাতে এবং শিক্ষার্থীদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে ব্যতিক্রম এমন আয়োজন করা হয়। বইমেলার পাশাপাশি আলোচনা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা, গল্প বলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। যেখানে ৪০ টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় হাজার শিক্ষার্থীদের আগমনে মিলন মেলায় পরিনত হয়।

যেখানে শিশু, কিশোর-কিশোরী সহ বিভিন্ন বয়সীরা ছেলে -মেয়ে বই কেনাকাটা করে। শুধু এ গ্রামের মানুষের জন্য এ বইমেলার আয়োজন নয়, আশপাশের তিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শিক্ষার্থীরা বইমেলাকে কেন্দ্র করে এক দিনের উৎসবে মেতে ওঠে। শিক্ষার মান উন্নয়নে ও বই পড়ায় মনোযোগী করার লক্ষ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় বই মেলা হওয়ায় উচ্ছস্বিত নজরে পড়ার মতো  শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

মেলায় গুনিজনদের আমন্ত্রন জানানো হয়। তারা শিক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এলাকাবাসীর মধ্যে সচেতনরা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। 

জানা যায়- শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষে বই পড়া, বই কেনা ও শিক্ষার প্রতি নতুন প্রজন্মকে আগ্রহী করে গড়ে তোলার লক্ষে ২০১১ সাল থেকে ‘মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি’ গড়ে তোলা হয়। এ সমিতির ব্যানারেই শিক্ষার প্রসারে নানা কার্যক্রম চলে বছরজুড়েই। বই মেলা উপলক্ষে দিনটির শুরু থেকে গ্রামে যেন এক উৎসব বিরাজ করে। আশপাশে কয়েকটি গ্রাম ও প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা মেলায় আসে। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বইমেলা থেকে বিভিন্ন জ্ঞানমুলক বই পেয়ে আন্দিত শিক্ষার্থীর।

কবিতা আবৃতি, কৌতুক, চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

মশিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিমেল সরকার ও অষ্টম 

সামিয়া ইসলাম বলেন, আমাদের স্কুল মাঠে বইমেলা হচ্ছে। যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসেছে।  আমাদের এ প্রত্যন্ত গ্রামে বইমেলায় হওয়ায় অত্যান্ত আনন্দিত। পাঠ্য বইয়ের বাহিরে বই মেলা থেকে বিভিন্ন বই সংগ্রহ করা যায়। যেখান থেকে আমাদের জ্ঞান চর্চায় সহায়ক ভূমিকা রাখে। মেলা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।

মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি সাধারন সম্পাদক শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রত্যন্ত এ গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার পরও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বেশি। এর কারণ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার হওয়ায় স্কুলে যাওয়ার প্রবণতা কম। এ কারণে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার প্রবনতা বেশি। সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপকরণ ও শিক্ষাবৃত্তি চালু করার পর ঝরে পড়ার প্রবনা কমেছে। বর্তমানে নতুন প্রজন্ম ও শিক্ষার্থী সোস্যাল মিডিয়ায় ঝুঁকে পড়েছে। তাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে প্রজন্মের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বইমেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়া সমিতির ব্যানারেই বছরজুড়েই চলে শিক্ষার নানা কর্মসূচী। বর্তমানে মানুষের মধ্যে বই পাঠের অভ্যাস গড়ে উঠেছে। এ কারণে গ্রামে পর্যায়ক্রমে এখন শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিভাবকরাও তাদের শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর ক্ষেত্রে আগ্রহী হচ্ছেন।প্রতি বছর শিক্ষাবিদদের ওই গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারা শিক্ষার উন্নয়নে দিকনির্দেশনা দেন।

বইমেলায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।সংগঠনের সহ-সভাপতি ও চৌবাড়িয়া হাট কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন- নড়াইল জেলার অগ্নীবিণা কেন্দ্রীয় সংসদের চেয়ারম্যান, নজরুল ভাবুক কবি ও সাংবাদিক এইচ.এম সিরাজ।

এসময় রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহ, মশিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ এবং মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি ও পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বক্তব্য রাখেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com