দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। পারি উৎপাদনে
ধ্বস, উচ্চ দামে খুশি বাগেরহাটের চাষিরা
দেশে সুপারি উৎপাদনে এগিয়ে থাকা জেলা বাগেরহাটে এবার দুটি ঘুর্নিঝড় রেমাল
ও দানার তান্ডপে চরম ভাবে ¶তিগ্রস্থ হয়েছে সুপারি বাগান। গত বছরের থেকে
চলতি মৌসুমে সুপারি নেমে দাড়িয়েছে মাত্র ৩০ ভাগে। তবে, সুপারির ফলন এবার
৭০ ভাগ কমে গেলেও দাম দ্বিগুনের বেশি থাকায় ক্ষতি কাটিয়ে আশার আলো দেখছেন
সুপারি চাষিরা। গত মৌসুমে ২৩১টি অর্থাত এক কুড়ি ভালো মানের সুপারি যেখানে
বিক্রি হয়েছিল ৩০০ টাকায়। এবার সেই সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। জেলার
লবনাক্ত এলাকা মোংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় সুপারি উৎপাদন কম হলেও
অন্য পাঁচটি উপজেলায় অধিক হারে সুপারির ফলন হয়ে থাকে। বাগেরহাট সদর,
কচুয়া, শরণখোলা, চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলায় নদ-নদীতে মিঠা
পানি থাকায় এসব এলাকার বাগান বাড়ীতে কৃষকরা অর্থকরি ফসল সুপারি আবাদ হয়ে
থাকে।
বাগেরহাটের কচুয়ায় সরগরম সুপারির হাটে গিয়ে দেখা যায়, হরদম কেনা-কাটা
চলছে সুপারির। প্রতি কুড়ি সুপারি আকার ভেদে ৫০০-৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি
হচ্ছে। বাজারে বিক্রেতা ও ক্রেতার সমাগম চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন এলাকা
থেকে ভ্যান, নছিমন, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলে কৃষকরা তাদের বাগানে উৎপাদিত
সুপারি নিয়ে আসছেন এই হাটে। শতাধিক সুপারির পাইকাররা সুপারি ক্রয় করে
নিজেদের ভাড়া করা ঘরে স্তুপ করে রাখছেন।
এখান থেকে সুপারি আবার বাছাই এবং চূড়ান্ত গণনা করে বস্তা ভর্তি করতে কাজ
করেন ট্রাকে করে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সৈয়দপুর, দিনাজপুরসহ
দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। সাপ্তাহিক এই হাটে কয়েক কোটি টাকার উপরে
সুপারি বিক্রি হচ্ছে। কচুয়া হাট ছাড়াও উপজেলার বাধাল, তালেশ্বর,
টেংড়াখালি, গজালিয়া বাজারেও সুপারি বিক্রি হয়। কচুয়া উপজেলায় ১ হাজার ২১০
হেক্টর জমিতে প্রায় ৪ হাজার ১১৪ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয় বছরে। কচুয়া
ছাড়াও জেলার বাগেরহাট সদর, শরণখোলা, চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট
উপজেলায়
কচুয়া উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামের সুপারি বিক্রেতা সুনিল রায় জানান,
আমদের মঘিয়া ইউনিয়নে বিগত সময়ে প্রচুর পরিমাণ সুপারি উৎপাদন হতো। কিন্তু
এ বছর ঘূর্ণিঝড় রেমাল ও দানার তান্ডপে সুপারির মঞ্জুরি (ফুল) পড়ে যাওয়ায়
এবার আমাদের সুপারি কম হয়েছে। তবে এবার দাম বেশি হওয়ায় অনেকটা পুষিয়ে
যাচ্ছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার ছোট দৈবঞ্জহাটি গ্রামের নয়ন তালুকদার, সালাম শেখ,
লতিফ, আবুল হোসেনসহ কয়েকজন সুপারি বাগান মালিক জানান, আমাদের এলাকাটা ছিল
মিষ্টি পানির। একারণে সুপারির ফলন ভাল হতো। বর্তমানে খালগুলে ভরাট হয়ে
যাওয়ার কারনে জলাবদ্ধতা ও লবনাক্ত পানি প্রবেশ করায় সুপারির উৎপাদন কমে
যাচ্ছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার সন্ন্যাসী বাজারে সুপারি ব্যবসায়ী মো. হারুন অর রশিদ
জানান, আমরা এই সুপারি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে থাকি। কিছু
সুপারি মদাই (৬০-৭৫ দিন পানিতে ভিজিয়ে উঠানো হয়) এবং কিছু সুপারি শুকানোও
হয়। সুপারির মৌসুম শেষে মদা ও শুকনো সুপারিরও চাহিদা রয়েছে। আমরা
মোটামুটি এই বাজারে সুষ্ঠভাবে ব্যবসা করে আসছি। খাউলিয়া ইউপি সদস্য মো.
মশিউর রহমান বলেন, বাগেরহাটের ৬টি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারির উৎপাদন
হয়। উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলায় এই সুপারি রপ্তানি হয়। এই এলাকার প্রতিটি
পরিবারের সুপারির বাগান রয়েছে। জেলার প্রধান অর্থকরি ফসল সুপারি শিল্পকে
টিকিয়ে রাখতে হলে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋনের পাশাপাশি কৃষি বিভাগ থেকে
প্রাকৃতিক দূর্যোগের পর সুপারি গাছের যতœ নেয়ার বিঘয়টি উল্লেখ করেন তিনি।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মোরেলগঞ্জ
উপজেলায় আঠারো হাজার কৃষক সুপারির সঙ্গে সম্প্রক্ত রয়েছে। এবার ঝড় ও
লবনাক্ততার কারণে সুপারির উৎপাদন অনেক কমে গেছে। তবে সুপারির উৎপাদন
কমলেও উচ্চ মূল্য থাকায় কৃষকরা ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার
জানান, বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, সুপারির জন্য
প্রসিদ্ধ জেলা বাগেরহাটে বিগত ২০২১-২২ মৌসুমে ৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর বাগানে
সুপারি উৎপাদন হয় ২৫ হাজার ৫২২ মেট্রিক টন। গত ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩ হাজার
৯৬৩ হেক্টর বাগানে সুপারি উৎপাদন হয় ২৬ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন। দুটি
ঘুর্নিঝড় রেমাল ও দানার তান্ডপে চরম ভাবে ¶তিগ্রস্থ হয় বাগেরহাট জেলার
সুপারি বাগান। ফলে চলতি মৌসুমে এজেলায় সুপারি উৎপাদন প্রায় ৭০ ভাগ কম হবে
বলে ধারনা করা হচ্ছে। সুপারি বাগানের পরিমান একই থাকলেও দুটি ঘূর্ণিঝড়ে
অকেত সুপারি গাছ ভেঙ্গে ও উপড়ে পড়ার পাশাপাশি উৎপাদনও কম হওয়ায় মৌসুম
শেষে উৎপাদনের প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। তবে, এবার সুপারি উৎপাদন কম হলেও
বাজারে উচ্চ মূল্য থাকায় কৃষকরা ক্ষতি অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পারবে। এখন
সুপারি সুপারির উৎপাদন বাড়াতে বাগান কুপিয়ে গোবর সার দেয়া যেতে পারে।
এজন্য আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।