সমাজসেবায় একুশে পদক পাওয়া দই বিক্রেতা মো. জিয়াউল হকের চাওয়া পূরণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একজন দরিদ্র মানুষ সমাজকে নিয়ে ভেবেছেন, কাজ করেছেন। দই বিক্রি করে পাঠাগার করেছেন, তিনি আমাকে বলেছেন, ওই পাঠাগারের স্থায়ী জমি দরকার। তার করে দেয়া স্কুলটিও সরকারি করার জন্য বলেছেন। আমি খোঁজখবর নেব। জিয়াউল হকের গ্রামে তার দাবি অনুযায়ী স্কুল করে দেয়া হবে। শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ভাষা আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে তার কন্যা বলেন, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে পাবেন। জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ হয়েছিল। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, সে ভাষণও নিষিদ্ধ ছিল। ইতিহাস বিকৃত করে জাতির পিতার নামটা পর্যন্ত মুছে ফেলা হয়েছিল। সব থেকে দুঃখের কথা হলো, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান, ভাষা আন্দোলনের যে ইতিহাস তার থেকেও কিন্তু জাতির পিতার নামটা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সারা পৃথিবী আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালন করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য একটি ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য কয়েকজনকে আমরা একুশে পদক দিতে পেরে আনন্দিত, গর্বিত। সমাজে আরও অনেক গুণী আছে। একসঙ্গে তো সবাইকে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে, ত্যাগী এই মানুষদের খুঁজে বের করা সমাজের উচ্চ শ্রেণির দায়িত্ব।
অনুষ্ঠানে ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ‘একুশে পদক ২০২৩’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ বছর যারা একুশে পদক পেলেন-
ভাষা আন্দোলন বিভাগে পুরস্কারের জন্য মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়ার (মরণোত্তর)। শিল্পকলা বিভাগে সংগীত ক্যাটাগরিতে জালাল উদ্দীন খা (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ (মরণোত্তর), বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর),
শুভ্রদেব। নৃত্যকলা ক্যাটাগরিতে শিবলী মোহাম্মদ, অভিনয় ক্যাটাগরিতে ডলি জহুর ও এম এ আলমগীর। আবৃত্তি ক্যাটাগরিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালিদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী। এছাড়াও চিত্রকলা ক্যাটাগরিতে শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিং ক্যাটাগরিতে কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবা বিভাগে মো. জিয়াউল হক, রফিক আহামদ, ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে মুহাম্মদ সামাদ, লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর, রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর) এবং শিক্ষা বিভাগে প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু-এ পুরস্কার পেয়েছেন।”
এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি সরকার নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ‘একুশে পদক’র জন্য ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের নাম ঘোষণা করে। এ বছর ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে দুজন, শিল্পকলায় ১২ জন, সমাজসেবায় দুজন, ভাষা ও সাহিত্যে চারজন এবং শিক্ষায় একজন বিশিষ্ট নাগরিক এ পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ‘একুশে পদক’ প্রবর্তন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বর্ণপদক, সম্মাননা সনদ ও নগদ অর্থ দিয়ে পুরস্কার প্রদান করে। ২০২৩ সালে ১৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানকে মর্যাদাপূর্ণ একুশে পদক দেয়া হয়।
b/alo