একমাত্র ছেলে পুলিশ কনস্টেবল সুমন কুমার ঘরামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে নির্বাক বসে আছেন বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুশিল কুমার ঘরামী। পাশে বসে ছেলের ছবি বুকে নিয়ে বিলাপ করছেন মা গীতা রানী। বীর নিবাসের অন্য কক্ষের মেঝেতে লুটিয়ে কান্না করছেন একমাত্র বোন সুমা ঘরামী। পাশে বসে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রতিবেশি ও স্বজনরা। আর ঘরের সামনে সিমেন্ট-বালু ও ইট দিয়ে সমাধি তৈরি করে অপেক্ষা মরদেহের অপেক্ষা করছেন স্থানীয়রা। শনিবার বিকেল ৫টায় বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার কিসমত মালিপাটন গ্রামের সুমজের বাড়ির দৃশ্য এটি।”
খুলনায় শুক্রবার (২ আগস্ট) কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষের সময় নিহত হন পুলিশ সদস্য সুমন কুমার ঘরামী (৩৫)। নিহত সুমন তার স্ত্রী ও ৫ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে স্নিগ্ধা ঘরামীকে নিয়ে খুলনার পূজাখোলা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনারের (সোনাডাঙ্গা জোন) দেহরক্ষী ছিলেন।”
বিকেল ৫ টা ২০ মিনিটের দিকে এ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহ পৌঁছায় সুমনের বাড়িতে। কান্নায় বেঙ্গে পড়েন স্বজন ও স্থানীয়রা। এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয় সুমনের বাড়ির সামনে। পরে সেখানে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সুমনকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। গার্ড অব অনার শেষে সুমনের নিথর দেহ নেওয়া ঘরের বারান্দায়। সেখানে বাবা-মা-বোন, স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয় স্বজনরা সুমনের মরদেহ শেষ বারের মত দেখেন। পরে সন্ধ্যায় নিজ ঘরের সামনে সুমনকে সমাহিত করা হয়। সুমনের বাবা-মায়ের ইচ্ছায় ছেলেকে দাহ না করে মাটি চাপা দেওয়া হয়।”
সুমনকে গার্ড অব অনার দেওয়া ও সমাহিত করার সময়, বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাসুদ রানা, কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বাবু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাখী ব্যানার্জী, কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহসিন হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ গন্যমান্য ব্যক্তিগন উপস্থিত ছিলেন।”
প্রতিবেশীরা জানান, তিনবার স্ট্রোক করেছেন সুমনের বাবা। শারীরিকভাবে বেশি সুস্থ না। ছেলের মৃত্যুর খবর এ নির্বাক হয়ে গেছে। কে কোন কথা বলছেন না। মাঝে মাঝে শুধু বলছেন মৃত্যুর বিচার চাই।
সুমনের মা গীতা রাণী বিলাপ করতে করতে বলেন, এত ছবি তুলে কি হবে, আমার ছেলেকে কি ফিরিয়ে দিতে পারবা। তোমরা এত ছবি তুলছ কেন।”
মেঝেতে লুটিয়ে কান্না করতে করতে সুমনের একমাত্র বোন সুমা ঘরামি বলেন, কারা মারল আমার ভাইকে। আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করে দিল। কে চালাবে আমাদেরকে এখন।
এদিকে সুমনের মৃত্যুর খবরে শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী স্থানীয় হরি মন্দিরের সামনে অপেক্ষায় সবার প্রিয় সুমনের জন্য। এই মন্দিরের পেছনেই পুলিশ কনস্টেবল সুমনের ঘরে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীর নিবাসে’র ঘর পেয়েছেন তারা।
প্রতিবেশী ও সুমনের বন্ধু সমর কৃষ্ণ ঘরামী বলেন, আমরা একসাথে এসএসসি পাস করছি। এরপর সে এইচএসসি পাস করে। এর কিছুদিন পর পুলিশে যোগদান করেন সুমন কুমার ঘরামী।”
রফিকুল ইসলাম নামের সুমনের এক সহপাঠি বলেন, সুমন অনেক ভাল মানুষ ছিল। সে সব সময় শ্রেনিকক্ষ মাতিয়ে রাখত। তার মৃত্যুতে আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি।”
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি মৃত্যুই কষ্টের। যারা সুমনকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার দাবি করেন তিনি।”
kn,gjt