December 23, 2024, 9:36 am
নোটিশ :
প্রকাশক ও সম্পাদক : মাসুম হাওলাদার।   বার্তা সম্পাদক : তানভীর সোহেল।     প্রধান কার্যালয় :  রেল রোড (কৃষি ব্যাংকের সামনে) বাগেরহাট। ইমেইল : press24masum@gmail.com

গাইবান্ধার পথে পথেঃসরু ফাঁকা রাস্তা গ্রামের ভেতর দিয়ে

মো: ইয়াকুব আলী, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), 314 বার
আপডেট সময় : সোমবার, মার্চ ২৫, ২০২৪

উত্তরের খেপ: গাইবান্ধার পথে পথে
গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি ব্রিজের ওপারে গাইবান্ধা অফিসের গাড়িতে উঠি। নিতে এসেছেন অফিসার আ: আলিম ও সিনে অপারেটর মাসুদ। আলিমের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। তিনি গাইবান্ধায় পোস্টিং পেয়েছেন মাস দুয়েক। মাসুদ নীলফামারির ছেলে। বগুড়া-রংপুর হাইওয়ে ধরে এগোচ্ছে গাড়ি। মহিমাগঞ্জ হয়ে যাওয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে মাসুদ জানায় অবশ্যই সম্ভব। ইউটার্ন করে গোবিন্দগঞ্জের ভেতর দিয়ে মহিমাগঞ্জের পথ ধরি। সরু ফাঁকা রাস্তা গ্রামের ভেতর দিয়ে। উত্তরবঙ্গে ভূট্টা চাষ হয় ভালোই। মাঠের ধানখেতে যেন সবুজ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। রাস্তার পাশে বাড়িঘরের চেহারা ভালোই। কুঁড়েঘর চোখে পড়ল না একটিও। দূরত্ব ১২/১৩ কিলোমিটার হলেও গ্রামীণ রাস্তা হওয়ায় সময় লেগেছে বেশি। মহিমাগঞ্জ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। তবে রেলস্টেশন আছে। স্টেশনে চলেন, ড্রাইভারকে বলি। বগুড়া-রংপুরের মাঝে ছোট্ট একটি স্টেশন। আমাদের গচিহাটা স্টেশনের চেয়ে ছোট। স্টেশনে কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। মাসুদের প্ররোচনায় স্টেশন মাস্টার এসে পরিচিত হলেন। তাঁর রুমে বসার আমন্ত্রণ জানালেন আমাদের। স্টেশন মাস্টারের বাড়ি স্টেশনের কাছেই। লক্ষ্য করি উত্তরবঙ্গের সবগুলো স্টেশনের প্লাটফর্মই উচু করা হয়েছে। ফলে যাত্রীদের ট্রেনে উঠানামা সহজ হয়েছে। এর আগে ট্রেনে উঠতে হতো ঝুলে। উচু করতে গিয়ে প্রায় প্রতিটি স্টেশনের প্লাটফর্ম এরিয়া (যাত্রীদের ব্যবহারের স্থান) সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। আবার স্টেশনের প্রবেশপথে উঁচু প্লাটফর্মে ওঠার জন্য নবনির্মিত সিঁড়িগুলোও হয়েছে অসুন্দর। সিঁড়ির বদলে স্লোপ হলে ভালো হতো। আমার প্রশ্ন শত বছর ধরে ট্রেনে কেন ঝুলে চড়তে হতো! রেল তো ইঞ্জিনিয়াররাই চালায়!
স্টেশন থেকে বেরিয়ে সামনে আগায় গাড়ি। হাতের ডানে চোখে পড়লো লাল রঙের সুউচ্চ বিশাল এক ইমারত। চিনিকল। মহিমাগঞ্জ চিনি কল। মাসুদ জানাল এটি বন্ধ। দেখার আগ্রহ জানাতে গাড়ি গেটে গিয়ে থামে। সাইনবোর্ডে লেখা: রংপুর চিনিকল। কল তো নয়, মিলের বিশাল এক ডেডবডি। সিকিউরিটিকে আমাদের আগ্রহের কথা জানালে মোবাইল ফোনে উপরস্ত অফিসারের অনুমতি নিয়ে আমাদের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দেয়। বিশাল চিমনিতে লেখা রয়েছে র চি ক। মিলের ভেতরটাতে কিছু আম-কাঠালের গাছ। মূল ভবনের আশপাশে ঘাস-লতা-গুল্মের জঙ্গল। মিল-বিল্ডিংয়ের দিকেই এগোই। পেছনে আমাদের দলের সঙ্গে স্বেচ্ছায় যোগ দেন মিলের একজন। তিনি মাসুদ ও আলিমের নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন।”

আমরা মিলের ভেতরটা দেখতে পারি কি না জানতে চাইলে তিনি ইতিবাচক জবাব দেন- যদিও গেটের সিকিউরিটি বলে দিয়েছিল যে, মূল ভবনের ভেতর ঢোকা যাবে না। ঘাস-লতার ভেতরে কনক্রিটের পথ ধরে সামনে এগোচ্ছিলাম আমরা। সবার সামনে হাঁটছিলাম আমি। ভবনের কাছাকাছি পৌছতেই লক্ষ্য করি ৫/৬ হাত দূরে বড়সড় একটি সাপ আড়াআড়িভাবে আমাদের রাস্তাটি পার হতে যাচ্ছে। ভয়ে শিউরে উঠে পিছিয়ে আসি। বলি: সাপ। অন্যদেরও নজরে পড়ল বিষধর গোখরো সাপটি। সামনে এগোনোর সাহস হারাই। চিনিকলের চারদিকের তুলনামূলক পরিষ্কার মূল রাস্তা ধরে হেঁটে দেখার সিদ্ধান্ত নিই। বিল্ডিংয়ের পেছন দিকটা দেখব বলে এগোই। চিনিকলের সেই কর্মীটি বললেন, এখানে সাপ মারা নিষেধ। কিছুদিন আগে ওঝারা এসে ৩/৪টি সাপ ধরেছিল। কিন্তু শেষ পযন্ত ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরদানের মধ্যে লোকটি কণ্ঠের বলিষ্ঠতায় মুগ্ধ হই। তিনি ছিলেন সপ্রতিভ ও বুদ্ধিদীপ্ত। সাবলীলভাবে ব্যক্ত করছিলেন মতামত। স্টাফ লেভেলে এমনটা চোখে পড়ে কম। আমি পেছন ফিরে তার পরিচয় জানতে চাই। তিনি মিলের স্টোরকিপার। মিল বন্ধ হয়েছে ২০২০সালে। ৬ টি মিলের সাথে মহিমাগঞ্জে এখন ক্রাসিং (মাড়াই) বন্ধ। এর আগেও ২০০৪ সালে লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছিল যদিও ২০০৮ সালে বিশেষ ব্যবস্থায় মিলটি চালু করা হয়। ব্যবস্থাটি হলো: কানামনা- কাজ নাই মজুরি নাই। চলে একটানা ১২ বছর। তিনি আমাদের একটি এনভাইরনমেন্ট প্লান্ট দেখালেন, কয়েক বছর আগে ৮/১০ কোটি টাকা ব্যয়ে যেটি স্থাপন করা হয়েছে। খেত থেকে মিলে আখ টানার জন্য ১১১ টি লরি (ট্রাক) পড়ে আছে এক জায়গায়। লতা পাতা বেড়ে উঠছে এগুলোর ওপর। এগুলোর কিছু কিছু অন্য মিলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো নষ্ট হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। মিলটি নতুন করে চালুর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। শ্রমিক-কর্মচারী কতজন ছিল? জানতে চাই।

  • বন্ধ হওয়ার সময় হাজার খানেক। তারও আগে আরো বেশি ছিল।
    -এখন কত জন কাজ করছে?
    -শ খানেক হবে। বেশির ভাগই ফার্ম ও সিকিউরিটি দেখাশোনা করছে।
    এমডি ছাড়াও কয়েকজন জিএম রয়েছেন। মিল কি কি কারণে লস করে তার ফিরিস্তি পাওয়া গেল তার কাছ থেকে। ভদ্রলোকের বাড়ি নীলফামারির কিশোরগঞ্জে। লেখাপড়া কতদূর জানতে চাইলে জানান, ৭৯ সালে জয়েন করেছিলেন মিলে। তখন ছিলেন মেট্রিক। পরে অনুমতি নিয়ে প্রাইভেটে বিএ পাস করেছেন। লে অফের সময় বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। এ বয়সে না পারা যায় কৃষিকাজ করতে, না পাওয়া যায় অন্য চাকরি। ছেলে প্রাইভেট থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কাজে ঢুকেছে, মেয়ে বেগম রোকেয়ায় পড়ছে। সহায় সম্পদ কিছু করেছেন কি না জানতে চাইলে জানান, পৈত্রিকসূত্রে যা পেয়েছিলেন সন্তানদের পড়াশোনায় তাও বিক্রি করতে হয়েছে। মিল বন্ধ হলে তার দুঃসহ সংগ্রাম শুরু হয়। পরে ২০০৮ সাল থেকে দৈনিক ৬৭৫ টাকা হাজিরায় কাজ করেন। এ দিয়ে কী হয়! লে অফ হওয়া শ্রমিক কর্মচারীদের কি দুঃসহ জীবন যাপন করতে হয় তার কিছুটা আমার জানা আছে। মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার ঘনিষ্ঠ দুজন আত্মীয় চাকরি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে দেখেছি। মিল শ্রমিকের পেশা কৃষিশ্রমিকের চেয়ে করুণ!
    গাড়ি তখন একটি আরবান গ্রোথ সেন্টারে। গাইবান্ধার সাগাটা উপজেলাটি কোথায় জানতে চাইলে ১০০ গজের মধ্যে আমাকে সাঘাটা ইউএনও অফিসের সাইনবোর্ড দেখানো হয়। অন্যরা বলল, পাশেই বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন। আমি রেলস্টেশনটি দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করি। রেলস্টেশন আমাকে সাংঘাতিক আকৃষ্ট করে। ব্রিটিশদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রেল ভারতে বিপ্লব এনে দেবে, ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন কার্ল মার্কস। বিপ্লব কি এসেছিল? তবে এ বঙ্গীয় বদ্বীপে নৌপথের চিরস্থায়ী সর্বনাশ ঘটেছিল। এদেশে বন্যার একটি বড়ো কারণ কিন্তু উঁচু রেললাইন। ইটনার হাওরের আবুরা (অল সিজন) সড়ক নাকি সিলেটসহ বিস্তীর্ণ এলাকার বন্যার কারণ। কক্সবাজারগামী রেললাইন নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই পাহাড়ে বন্যা হতে দেখেছি। তারপরও অনস্বীকার্য, যাতায়াতের বিপুল স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে রেল।
    সাঘাটা সদর আর বোনারপাড়া একই। কিছুদূর এগোলেই পড়ে বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন। একদিকে বগুড়া অন্যদিকে গাইবান্ধা। একটি সিংগেল লাইন চলে গেছে তিস্তামুখ ঘাটের দিকে যা বর্তমানে পরিত্যক্ত। বোনারপাড়া মসজিদে নামাজ পড়ে আমাদের গাড়ি এগোয় ফুলছড়ি ঘাটের দিকে।
    ফুলছড়ি গাইবান্ধার একটি উপজেলা। ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে এর অবস্থান। এ উপজেলার বেশির ভাগ অংশই চরাঞ্চল। ব্রহ্মপুত্রের কয়েকটি প্রবাহ এ এলাকায় যমুনা নাম ধারণ করে দক্ষিণ দিকে যমুনা হিসেবে প্রবাহিত হয়েছে। ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট এক সময় খুবই নামকরা ছিল। ফুলছড়ির ঘাটে নদীতীর পর্যন্ত বিরাট এক বাধ নির্মিত হয়েছে মাটির। প্রশস্ত ২/৩ শ ফুট হতে পারে। উচ্চতায়ও ৫০ ফুটের কম নয়। অনেক নিচে নৌঘাট। সেদিন ছিল হাটবার। চর থেকে হাজার হাজার মানুষ এসেছে শত শত নৌকায় করে। ততক্ষণে বিকেল। নানান সওদা বোঝাই করে চরবাসীরা ফিরছেন নিজ নিজ গৃহে। বেলে মাটির চরের প্রধান বাহন ঘোড়া অথবা সিঙ্গেল ঘোড়ার টানা গাড়ি। মাল পরিবহনে সুবিধাজনক। ফুলছড়ির ঘাটে অন্তত ৫০টি ঘোড়ার গাড়ি চোখে পড়ে। এসময় ঢাকা থেকে ফোন পাই পিআইডির স্নেহভাজন সহকর্মী Ruhul Amin Chisty র। তার বাড়ি গাইবান্ধায়। আমি গাইবান্ধা যাচ্ছি জেনে এ সময় নিজে না থাকতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আমার নিরাপদ ও নির্ঝঞ্জাট ভ্রমণ কামনা করেন।
    যমুনা সেতু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের মানুষের যাতায়াত ছিল তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরির মাধ্যমে। উত্তরবঙ্গের মানুষ ট্রেনে তিস্তামুখ পযন্ত পৌছতেন; পরে ফেরিতে বাহাদুরাবাদ ঘাটে এসে ঢাকার ট্রেনে উঠতেন। তিস্তামুখ-বাহাদুরাবাদ রুটে রেলওয়ে ওয়াগন ফেরি চালু হয় ১৯৩৮ সালে। ফেরিতে পার হতো ট্রেনযাত্রী ও পণ্যবাহী ওয়াগন। সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দাবি করা হয় এক সময় এ রুটে ফেরিতে আস্ত রেলগাড়ি পার হতো। বিষয়টি সর্বৈব মিথ্যা ও গুজব। এ বঙ্গে কখনোই আস্ত রেলগাড়ি ফেরিতে পার হয়নি। রিউমার স্ক্যানার জানিয়েছে, ছবিটি আমেরিকার লুসিয়ানার মিসিসিপি নদী পারাপাররত রেলওয়ে ফেরির। নাব্যতা সংকটের কারণে ১৯৯০ সালে ফেরি সার্ভিস তিস্তামুখ ঘাট হতে একই উপজেলার বালাসী ঘাটে সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর ২০০০ সাল থেকে বাহাদুরাবাদ-বালাসী ঘাট রুটের ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়। ২০২২ সালে এ রুটে ফেরির বদলে চালু হয় লঞ্চ সার্ভিস। বালাসীতে লঞ্চঘাটও রয়েছে একটি। বর্ষাকালে ৩-৪ মাস চলে লঞ্চ। বাকি সময় ইঞ্জিনচালিত শ্যালো নৌকাই ভরসা। জানা যায়, এ রুটের দৈর্ঘ্য ৩৯ কিলোমিটার। বালাসী ঘাটে এসে দেখি ৩০/৪০টি নৌকা নোঙর করা রয়েছে ঘাটে। আধা ঘণ্টার জন্য একটি ইঞ্জিনচালিত দেশি নৌকা রিজার্ভ করি নৌবিহারের উদ্দেশ্যে। ভাড়া ২০০ টাকা। নদীতে টলটলে স্বচ্ছ পানি। তপ্ত দুপুরের পর রমজানের বিকেলে নদীতে ঝিরঝিরে হাওয়া। পরম স্বস্তিলাভ করি। ব্রহ্মপুত্রের উজান দিকে বয়ে চলে আমাদের নৌকা। এ এলাকায় মৃদু নদীভাঙন চোখে পড়ল। নদীতীরে লক্ষ্য করি মাটির পাললিক স্তর। ছোট ছোট অসংখ্য গর্ত পানিস্তর বরাবর। নদীতীরে সবুজ ভূট্টার ক্ষেত। ফলন ভালো হয়েছে। ভূট্টাচাষ বদলে দিচ্ছে উত্তরাঞ্চলের কৃষির গতি প্রকৃতি।
    বালাসী ঘাট থেকে শহরে ফেরার পালা। পথে নামতে হলো ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে। গ্রামের নাম মদনের পাড়া। ফুলছড়ির কঞ্চিপাড়া ইউনিয়ন। এটি একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের ট্রেনিং সেন্টার। প্রথম দর্শনেই চমকে যাই। মহাস্থানগড়ের আদল। গ্রাউন্ড লেভেলে ভবনের ছাদ। ছাদে সবুজ দুর্বাঘাস। কমপ্লেক্সের দেয়াল ও পাশের পরিখা দেখেই মনে হলো আরেক মহাস্থানগড়। পুরো স্ট্রাকচার মাটির নিচে। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই নিচে দৃষ্টিনন্দন একটি ভবন কমপ্লেক্স। মাঝখানে একটি পলাশ গাছের ফুল ফুটেছে রক্তলাল। রোজার দিনের বিকেল বলে লোকজন ছিল না। ডাকাডাকি করে একজনকে পাওয়া গেল। তিনি আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন। কারা এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসে জানতে চাই।
    -আমাদের কাযক্রম চরকেন্দ্রিকে। আমাদের বেনিফিসিয়ারিগন এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। প্রশিক্ষণের কাজে ভাড়াও দেওয়া হয়, জানালেন তিনি।

  • কি কি সুযোগ সুবিধা জানতে চাইলে বলা হয়, প্রশিক্ষণ রুম আছে দুটি। একটিতে ৬০-৭০ জনের অন্যটি ১২০ জনের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা যায়। মাসুদ বললেন, স্যার আপনারা তো ঢাকার বাইরে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ করেন। পরবর্তী প্রোগ্রামটি এখানে করতে পারেন। আলিম বলেন, স্যার আামি থাকতে থাকতেই একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেন। আলীমের চাকরি আছে আর এক বছর। ‍সুযোগ সুবিধা কেমন স্বচক্ষে দেখতে চাইলে ডরমিটরির একটি রুম খুলে দেখানো হলো। ডাবল বেড উইথ অ্যাটাচড বাথ। এ রকম রুম আছে ২৪টি। বষায় সমস্যা হয় না। ছাদের লুক্কায়িত ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো। কমপ্লেক্সে রয়েছে কয়েকটি ওয়াটার পুল- যদিও এগুলোর পানি যথেষ্ট স্বচ্ছ মনে হনা।
    জানা যায়, ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের উদ্যোক্তা রুনা খান। ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর এটি উদ্বোধন করা হয়। ভবনের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট। নির্মাণ করতে সময় লেগেছে দুই বছর। নির্মাণ ব্যয় আট কোটি টাকা। প্লাস্টারবিহীন লাল ইটের গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত ভবনটি সত্যিই বাংলাদেশের স্থাপত্য ঐতিহ্যে একটি মাইলফলক। কমপ্লেক্সের স্থপতি কাসেফ মাহবুব চৌধুরী। অ্যাম্বাসেডর Shamim Ahsan স্যার (ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ মিশনে স্যারের সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি) জানিয়েছিলেন, স্থাপত্যটি আন্তর্জাতিক বোদ্ধা মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। জানা গেছে এটি অভিজাত কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশে এটি অবশ্য দর্শনীয় একটি স্থান।
    সন্ধ্যায় ইফতার সেরে এসকেএস ইনে ঢু মারি। সময় কম বলে সার্কিট হাউসে ওঠা হয় না। এসকেএস একটি নবীন এনজিও। বর্তমানে উত্তরবঙ্গের সব জেলায় এর কাযক্রম রয়েছে। বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রতিবাদী এক কিশোরের হাত ধরে গড়ে উঠে একটি সামাজিক সংগঠন। ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ডোনারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সোজা কথা ক্লিক করেছে। দেশের হাজার হাজার সামাজিক সমিতি শুরুর পর দ্রুতই শেষ হয়ে যায়। রাসেল আহম্মেদ লিটনেরটি শুধু সমৃদ্ধই হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কমপ্লেক্সের ভেতরে চমৎকার রিসোর্ট। লেকের পাশে নির্মিত কটেজ, লেকের ওপর ঝুলন্ত ব্রিজ, সবকিছু ঘিরে নীল আলোর রোশনাই নয়নাভিরাম। ভেতরে হাঁটার পথেও আলোক প্রক্ষেপন করা হয়েছে শৈল্পিকভাবে। রাস্তা ও আশপাশ নিট এন্ড ক্লিন। একটি পাতাও পড়ে নেই কোথাও। যেন বিদেশের একটি স্থাপনা। আছে বার্ডস স্যাংকচুয়ারি। রাতের বেলায় মোবাইলের টর্চে দেখলাম বেশ কিছু পাখি। কয়েকটি ময়ূর। গাইবান্ধার সাবেক তথ্য অফিসার Hridoy Mahmud Chayan আমাকে বলেছেন, এখানে নাকি সন্ধ্যায় বাউল গান হয়। রোজা বলে এসব বন্ধ। মাসুদের পীড়াপীড়িতে যেতে হয় তিনতলায় রেডিও সারাবেলার অফিসে। এর আগে মোবাইলে কথা বলে নেয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। মাসুদ জানাল, আমাদের মন্ত্রী মহোদয় (বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী) গাইবান্ধা এসে এখানেই মধ্যাহ্নভোজ করেন। রেডিও সারাবেলার শিফট ইন চার্জ ও প্রোগ্রাম প্রডিউসারের সঙ্গে দেখা হয়। তারা ব্রিফ করেন। মাত্র ৯ জন কর্মী দিয়ে চলছে ২৫ কিলো রেডিয়াসের মধ্যে সম্প্রচার। অনলাইনেও শোনা যায়। তাদের শ্রোতা নাকি ১০ লাখ। কি অনুষ্ঠান হিট জানতে চাইলে বলা হয়, বগুড়া ও গাইবান্ধার আঞ্চলিক ভাষায় পরিচালিত লাইভ অনুষ্ঠানে শ্রোতারা ভালো ইন্টারএক্ট করে থাকেন। পরিদর্শন শেষে আমাদের আপ্যায়ন করানো হয় এসকেএস ইনের নিজস্ব রেস্তোরা জলধারায়। ঢাকার বাইরে এমন চমৎকার প্রতিষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হই”
    শহরে ফিরে একটি অটো নিই আধাঘণ্টার জন্য। গাড়িতে করে শহর দেখা যায় না। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনার পাশ দিয়ে চলে আমাদের অটো। গাইবান্ধায় নাকি প্রেসক্লাব মোট চারটি। অভিজাত এলাকা মাস্টারপাড়ার ভেতর ঢুকি। চয়নের বাসাটি যে বিল্ডিংয়ে ছিল সেটিও দেখায় মাসুদ। গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, খোলামেলা গাইবান্ধা বয়েজ হাই স্কুলসহ (১৮৮৫) বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখা শেষে শহরের কেন্দ্রস্থলে রেলস্টেশন পরিদর্শনের মাধ্যমে শেষ হয় গাইবান্ধা পর্ব। #
  • লেখক: মো: ইয়াকুব আলী, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, ঢাকা ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By ThemesDealer.Com