ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা উঠছে কোনও কোনও মহল থেকে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেছেন, দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছে। সরকার সবার মতামত গ্রহণ করে তার অবস্থান পরিষ্কার করবে। তবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ যে অপরাজনীতি করেছে সেই রাজনীতি যেন ক্যাম্পাসে ফিরে না আসে সেটা আমাদের অঙ্গীকার।
রোববার বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ব্যাপারে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন হয়।মাহফুজ আলম বলেন, ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে প্রতিটি ক্যাম্পাসে আলোচনা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখন স্পষ্ট গাইডলাইন দেওয়া হয়নি। কোন ফরমেটে রাজনীতি হবে সেই আলোচনা সব জায়গায় চলছে। আমরা চাই সমাজের বিভিন্ন অংশ, ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হোক। এরপর যে সারসংক্ষেপ আসবে সেই অনুযায়ী সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করবে।
তিনি বলেন, ছাত্রদের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক দরকার। কিন্তু সেই সম্পর্ক হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। প্রতিবেশীর সঙ্গে পারস্পরিক সমান সম্মান এবং ন্যায্যাতার ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে সার্ককে আরও কার্যকর করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।"
তিনি জানান, আজ এ সরকারের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। গণআন্দোলনের সামনে ও পেছন থেকে যারা নেতৃত্বে দিয়েছেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে নানা বিষয় আলোচনা এসেছে। ছাত্ররা বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও পরিবর্তন কথা বলেছেন। সরকারের তরফ থেকে আহত ও নিহতের বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেই বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে। একটি ফাউন্ডেশন করে কাজটি দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে শহিদ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহত পরিবারকে পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করার বিষয়টি এনেছেন। এ ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। সরকার প্রধান সেটি শুনেছেন, কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি। মাহফুজ আলম বলেন, সেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নয়, আলোচনা হয়েছে ধর্মকে নিয়ে অপরাজনীতি করার বিষয়ে।"
গণহারে মামলার প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার, এগুলো কোনো ভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। কোনও ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে হামলা-মামলা করতে পারবে না। যারা ফ্যাসিবাদের দালাল ও দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছে তাদের বিচার অবশ্যই হবে।"
মাহফুজ বলেন, সবাইকে শুধু এতটুকু খেয়াল রাখবে যাতে কোনও ক¤েপ্রামাইজ না হয়। যারা শহিদ হয়েছেন ও আহত হয়েছেন তাদের সঙ্গে বেঈমানি যাতে না হয়। সরকার এ ব্যাপারে কঠোর। এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, ভবিষতে আরও নেওয়া হবে। তবে জনগণ যাতে নিজের হাতে আইন তুলে না নেন সরকারের বার্তা সেটা।
মাহফুজ আলম বলেন, যারা এতদিন নানা প্ল্যাটফর্মে আসতে পারেনি তাদের আজ ডাকা হয়েছে। ধীরে ধীরে বাকিদের ডাকা হবে। সবাই সরকারকে তাদের পরামর্শ দেবেন, সেই সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হবে।
ব্রিফিং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম, মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।"sk